বিনোদন প্রতিবেদক
কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা ও সংসদ সদস্য ফারুকের জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তবে ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণের পর আর কখনোই নিজের জন্মদিন বিশেষভাবে উদযাপন করেননি এই নায়ক। এমনকি ছোটবেলা থেকেই তার জন্মদিন বিশেষভাবে উদযাপিত হতো না। কারণ মাত্র আট বছর বয়সে ফারুক তার মা আফজালুন্নেসাকে হারিয়েছেন। মাকে হারানোর পর থেকেই যেন ফারুক জীবন সংগ্রামে পড়ে যান। তাই জন্মদিন নিয়ে কখনোই তার বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল না। আর এবারের জন্মদিনটি কাটছে আরও বিষাদে। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে গা ভর্তি জ্বর নিয়ে ৭২ বছর পূর্ণ করলেন এই অভিনেতা। ‘সুজন সখী’ খ্যাত ফারুক বলেন, ‘শরীর আসলে বেশ কয়েকদিন ধরেই খারাপ যাচ্ছিলো। অবশেষে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে ১৬ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। জ্বর কমছে না। করোনা টেস্ট করিয়েছি দুইবার। আলহামদুলিল্লাহ, নেগেটিভই এসেছে। সেদিক থেকে দুশ্চিন্তা নেই। দোয়া চাই যেন সুস্থ হয়ে উঠি দ্রুত।’ জন্মদিন উপলক্ষে তিনি বলেন, ‘জন্মদিন নিয়ে কোনোদিনই আমার বাড়তি উচ্ছ্বাস ছিলো না। একে তো আগস্ট শোকের মাস। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি জন্মদিন পালন করি না। তার উপর মায়ের মৃত্যু ছোটবেলায় মনটাকে একদম বিষিয়ে দিয়েছিলো। জীবনের সংগ্রাম দেখেছি খুব নিষ্ঠুরতা আর নির্মম অভিজ্ঞতায়। সেসব থাক। আমি সবার দোয়া চাই। যারা আমাকে জন্মদিনে ভালোবাসা দিয়েছেন তাদের জন্য আমার ভালোবাসা।’ ফারুকের পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। কিন্তু ফারুক নামে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর ও যৌবনে তিনি খুবই দূরন্তপনা ছিলেন। আর ওই সময়টা কেটেছে গ্রামের বাড়ি ও পুরান ঢাকায়। এখন তিনি থাকেন উত্তরায় নিজ বাড়ীতে। গ্রামের বাড়ী গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামে। বাবার নাম আজগর হোসেন। ৫ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ব্যক্তি জীবনে ফারুক ভালোবেসে বিয়ে করেন ফারজানা পাঠানকে। তাদের দাম্পত্য জীবনে ফারিহা তাবাসসুম নামের একটি কন্যা ও রওশন হোসেন নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। চিত্রনায়ক ফারুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামনের ডাকে সারা দিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এনে দেন স্বাধীন সার্বভৌত্বের লাল সূর্য। বিশ্ব মানচিত্রে অঙ্কন করেন বাংলা নামের একটি দেশের জলছবি। বর্তমানে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ফারুক। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ফারুকের অত্মপ্রকাশ হয়। প্রথম ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন মিষ্টি মেয়ে কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় আবার তোরা মানুষ হ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার আলোর মিছিল এ দুটি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে তার অভিনীত সুজন সখী ও লাঠিয়াল ছবি দুটি ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। ওই বছর লাঠিয়াল-এর জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৭৬ সালে সূর্যগ্রহণ ও নয়নমনি, ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের সারেং বৌ, আমজাদ হোসেনের গোলাপী এখন ট্রেনেসহ বেশকিছু ছবিতে মিয়া ভাই খ্যাত চিত্রনায়ক ফারুকের অভিনয় প্রশংসিত হয়। চলচ্চিত্র ও রাজনীতি জীবনের বাইরে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। গাজীপুরে অবস্থিত নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
নায়ক ফারুকের জন্মদিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায়
আগের পোস্ট