নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমান আজকের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভীত রচিত হয়েছিল জাতির পিতার নেতৃত্বে। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার রক্তস্নাত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শূন্য কোষাগার নিয়ে যেভাবে একটি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে সফলতা অর্জন করেছিল তা বিস্ময়কর ব্যাপার।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার গজারিয়ার ভাটেরচর স্কুল প্রাঙ্গণে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেফায়েতুল্লাহ খান তোতা, ডা. মাজহারুল হক তপন, শফিউল্লাহ শফি, মোহাম্মদ আলী খোকন, মিজানুর রহমান প্রধান, শাখাওয়াত হোসেন, মো. শাহীন, বাবুল আক্তার, আতাউর রহমান নেকী খোকন, ফরিদা ইয়াসমিন, সাইদুর রহমান খান প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে আমাদের মহান মুক্তিদাতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কল্যাণ অর্জনে নিজেকে আত্মনিবেদন করেছিলেন। এ মহান নেতার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো মানবকল্যাণ ও সুশৃঙ্খল শান্তিকামী কল্যাণকর সমাজ ও জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। জাতির পিতা সারাজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার রাজনীতি করেছেন। বাংলার দুঃখী মানুষের পাশে থাকার রাজনীতি। বৃটিশ শাসকদের প্রতিষ্ঠিত শোষণযন্ত্র জমিদারী প্রথা, সুদখোর মহাজন ও অতিরিক্ত মুনাফাখোর মহাজনী প্রথা থেকে শুরু করে ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক তথা জীবনমান উন্নয়নে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আরোধ্য সাধনা সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। এদেশের মানুষের কল্যাণ তথা দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য হাতে একটি দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভীত রচনা করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার রক্তস্নাত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শূন্য কোষাগার নিয়ে যেভাবে একটি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে সফলতা অর্জন করেছিল তা বিস্ময়কর ব্যাপার। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনকারী ১ কোটি লোকের পুনর্বাসন ও দেশের অভ্যন্তরে ৩ কোটি ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাদ্য সংস্থান, ৩ মাসের মধ্যে ভারতীয় সৈন্যদের ফেরত পাঠানো, পাকিস্তানে আটক প্রায় ৪ লক্ষ বাঙালিকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসিত করা, ৭ লাখ পাকিস্তানীকে ফেরৎ পাঠানো, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ফিরিয়ে নেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের দায়িত্ব গ্রহণ, চিকিৎসার জন্য পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেশ প্রেরণ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন, প্রতি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতাল নির্মাণ, ১১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগসহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা নির্মাণ, সেনা বিমান ও নৌবাহিনীসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জাতীয় মর্যাদায় পুনর্গঠন, সামরিক একাডেমী স্থাপন, পুলিশ বি.ডি.আর আনসার ও বেসামরিক প্রশাসনের অবকাঠামো গড়ে তোলা, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত ও ফারাক্কার পানি চুক্তি, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ ও ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি লাভের ন্যায় কারিশম্যাটিক সফলতা অর্জন বাংলার জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অপরিসীম ত্যাগের মানসিকতার ফলে সম্ভব হয়েছিল।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বহু আগেই উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছে যেতে সক্ষম হতো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রক্তস্নাত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শূন্য হাতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ কালপর্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়। ১৯৭২-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়কালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল সর্বাপেক্ষা বেশি ৭.০৬ শতাংশ। জিয়াউর রহমানের আমলে প্রবৃদ্ধি কমে গিয়ে ৪.৭৫ শতাংশে এবং এরশাদের আমলে আরও কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩.৯৫ শতাংশে। বঙ্গবন্ধুর আমলে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ডলার। জিয়া ও এরশাদের আমলে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে যথাক্রমে ৩৮০ কোটি ডলার ও ১০৩৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ভূমিহীনদের সংখ্যা বঙ্গবন্ধু আমলে ছিল ৩৫ শতাংশ। জেনারেল জিয়ার আমলে ৫৫ শতাংশ আর এরশাদ আমলে ৭৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে দাঁড়ায়।