কৃষিজমি বাঁচাতে কৃষকের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ও একমাত্র খালটি ভরাট করে দখল নেয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে কৃষিজমিগুলোতে। লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া ও গাঁওদিয়া ইউনিয়নের খিদিরপাড়া, কাজিরগাঁ, পূর্ববুড়দিয়া বনসেমন্ত গ্রামের ৫টি বিলের প্রায় ৫শ’ একর কৃষিজমিতে গত ৪ বছর যাবত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় কোন ফসল না করতে পারায় এসব কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ায় কৃষকেরা কৃষিকাজে তাদের মনোবল হারাচ্ছে। খাল খনন ও কৃষক বাঁচাও এইলক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে খাল দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন প্রায় ৫’শ একর জমির মালিকানাধীন ৫টি গ্রামের কৃষকেরা। উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়নের খিদিরপারা, খলাপাড়া, বন সেমন্ত, কাজিরগাঁও গ্রামের একমাত্র পানি নিষ্কাশনের ভরসার খালটি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। এতে এসকল গ্রামের কৃষিজমির পানি নামতে পারছে না। ফলে কোন ধরনের চাষাবাদ করতে পারছে না কৃষকেরা। যার কারণ কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রতিবাদে ও দ্রুত খাল দখল মুক্ত ও খননের দাবিতে গতকাল বুধবার দুপুরে অনাবাদি জমিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন কৃষকেরা। তাদের দাবি আবাদযোগ্য জমি চাই।
জানা যায়, উপজেলার বেশিরভাগ খালগুলো পলি পড়ে ভরাট ও প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি জুলহাস বেপারী সরকারি পাকা কালবার্ট/ব্রিজ ভেঙে খাল ভরাট করেছে। ফলে জমিতে আটকে থাকা পানি সঠিক সময় নামতে পারছে না।
কৃষক ওবায়দুল ইসলাম হিমু, সুলতান বেপারী জানান, গত ৩/৪ বছর যাবত আমরা এ জমিতে কোন কিছু আবাদ করতে পারছি না। আগে প্রথমে আলু রোপণ করতাম তারপর ধান, তিল, ভুট্টা, সরিষাও রোপণ করেছি। এ প্রভাবশালী খাল দখলদারদের কারণে আজ আমরা কৃষি পেশা থেকে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছি। আলী, সেলিম, দুলাল, মন্নাফ হাওলাদারসহ আরও কৃষকেরা জানান, আমাদের এখানে প্রায় ৫শ একর কৃষিজমি রয়েছে।
কিন্তু এখন সারাবছর পানি জমে থাকে। অনাবাদি অবস্থা দেখে বুকটা ফেটে যায়। সরকারের কাছে দাবি যেনো দ্রুত প্রায় ২ কিলোমিটারের খালটি দখল মুক্ত করে তার সাথে খননের ব্যবস্থা করে। এতে আমরা কৃষকেরা বাঁচবো। দেশের কৃষিখাতে ক্ষতি কমবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি জুলহাস বেপারী জানান, এখানের যে ব্রিজটি ছিলো সে ব্রিজ দিয়ে গাড়ি যেতে পারতো না। তাই ভেঙে রাস্তা নির্মাণ করেছি। ইউএনও সাহেব এসে দেখে গিয়েছে। সে আশ্বাস দিয়েছে এখান দিয়ে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জানান, এ খালগুলো দখলমুক্ত করার জন্য ইউএনও বরাবর লিখিত চিঠি প্রেরণ করেছি। ইউএনও, ইঞ্জিনিয়ারসহ আমি পরিদর্শনও করেছি। কেনো খালটি খনন হচ্ছে না এ বিষয় আমি বলতে পারবো না। তবে খালগুলো দখলমুক্ত ও খনন করা অতি জরুরি। তিনি আরও জানান, লৌহজংয়ে ৮ হাজার ২১৫ হেক্টর কৃষিজমিতে আবাদ করা হতো। এখন ৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হচ্ছে। বাকি ১ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি অনাবাদি অবস্থায় ও নদীতে ভেঙে গেছে। ফলে কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদী, ভাঙন, খাল দখলের কারণে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে কৃষিখাতে। কৃষিখাতকে পুনরুদ্ধার করতে হলে আমাদের প্রথমত খালগুলো অবমুক্ত করতে হবে এবং খাল খনন এখন একটি যৌক্তিক দাবি কৃষকের।