রাষ্ট্রের টেকসই দ্রুত উন্নয়নের জন্য জনগোষ্ঠীকে আধুনিক সৃষ্টিশীল শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিকল্প নেই। এটাও সত্য যে, জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের শিক্ষা হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষাই প্রান্তিক শিক্ষা হিসেবে জনশক্তিতে ক্রীড়াশীল আছে। যোগ্যতাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা কাঠামো বাস্তবায়নে আমাদের গজারিয়া উপজেলা বিভিন্ন সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে চলমান আছে। গজারিয়া উপজেলায় ৮৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার প্রত্যেকটি ভবনই পাকা। এর মধ্যে একতলা ভবন ৩টি, দোতলা ভবন ৩৬টি ও ফ্লাট সেন্টার ২০টি। বিদ্যালয় গমন উপযোগী ৬+-১০+ শতভাগ শিশুদের এরই মধ্যে আমরা বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। গজারিয়া উপজেলায় বর্তমানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সরকারি বিদ্যালয়ে ১১,৭৭৮ জন ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭,৯২২ জন। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। গজারিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্তের হার ৯৮.২% যা দেশের জন্য অনন্য স্ট্যান্ডার্ড মান। শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব শ্রেণিকক্ষ, আঙ্গিনা, ওয়াশব্লক, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, শেখ রাসেল কর্ণার, ফুলের বাগান, সাধ্যমত বাউন্ডারি ওয়াল, সজ্জিত ড্রিম প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ বিদ্যালয়ে শোভা পাচ্ছে। শ্রেণিকক্ষের শিখন শেখানো কার্যক্রমে পরীক্ষণ পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি, করণ শিখন পদ্ধতি, প্রজেক্ট পদ্ধতি, আলোচনা পদ্ধতি, MWTL পদ্ধতিসহ আরো বাস্তবভিত্তিক নানা পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকায় শ্রেণিভিত্তিক যোগ্যতা এবং বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা উত্তমভাবে অর্জিত হচ্ছে। বিতর্ক, সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, গল্প বলা, ছড়া লেখার প্রতিযোগিতা, ফুটবল, ক্রিকেট, কেরাম, দাড়িয়াবান্ধা, আন্তঃক্রীড়া, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ইত্যাদি সহশিক্ষা কার্যক্রম রুটিনের অংশ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূুপান্তরিত করতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। প্রাথমিক শিক্ষায় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করণার্থে এস.এম.সি সভা, মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, অভিভাবক সমাবেশ, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মিটিং নিয়মিতই হয়ে থাকে।
SDG বিশ্ব মানবতার সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক একটি কর্মপরিকল্পনা : এখানে ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে। ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৪নং লক্ষ্যটি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে গজারিয়া উপজেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে প্রায়ই বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করি। শিক্ষকদের উপস্থিতি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল ও বিভিন্ন সংস্কার কাজে সহযোগিতা করে থাকি। শিক্ষার্থীদের সাথে, তাদের অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে সচেতনতামূলক দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষার হার ও মানোন্নয়নে গজারিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর, শিক্ষকবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন একসাথে কাজ করছে। প্রাথমিক শিক্ষায় গজারিয়া উপজেলা মুন্সীগঞ্জ তথা দেশে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের জনসম্পদের সুঘ্রাণ সারা পৃথিবী পায়। তার পেছনে প্রান্তিক শিক্ষা হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষার শক্তি সৃজনী ভূমিকা রাখছে। গজারিয়া উপজেলা প্রশাসন সেই শক্তিকে আরো শক্তিময় করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী।
লেখক
জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ।