নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলায় এরশাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতির তৎপরতা বেড়েছে। এখানে জাতীয় পার্টির রাজনীতি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ রাজনীতির মাঠে নেতা-কর্মীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথম থেকে যারা এখানে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো তারা অনেকেই অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। আবার অনেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে একাধিক সুবিধা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে এখান থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। যাদের আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তারা এখন জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে রয়েছেন। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে শক্তিশালীর নেতৃত্বের লক্ষ্যে ইউনিয়ন সম্মেলন হচ্ছে। তবে আশার আলো হচ্ছে যে, যারা এখনো জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে রয়েছেন তারা আগামীতে কোমর বেঁধে এখানকার রাজনীতি চাঙ্গাভাব তৈরিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। আর সে কারণেই ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এখানে জেলা জাতীয় পার্টির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির শেষ সম্মেলনে সভাপতি হন প্রয়াত সিনিয়র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কুতুব উদ্দিন চোকদার। তার সাথে গজারিয়ার সন্তান হাজী আব্দুল বাতেন হন সাধারণ সম্পাদক। তাদের মাধ্যমে ২০০৮ সালের পর থেকে এখানে দিবসভিত্তিক রাজনৈতিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতৃত্ব দিলেও এখানকার রাজনীতিতে তেমনটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। বরং কুতুব উদ্দিন চোকদারের মৃত্যুতে মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টি অনেকটা নড়বড়ে অবস্থায় পড়ে যায়। পরে মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়। আর তাতে আহ্বায়ক হয়ে আসেন প্রয়াত এইচ এম এরশাদের আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির নেতা এডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম। ইতোমধ্যে হাজী আব্দুল বাতেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, বাতেনকে বহিষ্কারের বিষয়টি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টি আরো এক দফা নিষ্ক্রিয় রাজনীতির পথে ধাবিত হবে বলে অনেকের ধারণা। কারণ মুন্সীগঞ্জে জাতীয় পার্টির সভা সেমিনারগুলোতে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে থাকেন বাতেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ.এফ. আরিফ উজ জামান দিদার বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আসন্ন মতবিনিময় সভাকে সামনে রেখে এখন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে জেলায় শক্তিশালী নেতৃত্বের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির ভরা যৌবনে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইকবাল হোসেন ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ জামাল হোসেন সেখানে নেতৃত্ব দেন। তবে তারা এখনো জাতীয় পার্টিতে থাকলেও নেতৃত্বে অনেকটাই কোনঠাসা। কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির কোষাধ্যক্ষ প্রয়াত আলহাজ্ব কলিম উল্লাহ মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির ক্রান্তিকালে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রাক্কালে মারা যান। তার সময়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম দেখা গেলেও তার মৃত্যুর পর দলীয় কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। বর্তমানে তার ছেলে সেলিম উল্লাহ জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। এখানে প্রথমদিকে প্রয়াত এডভোকেট বজলুর রহমান মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির হাল ধরেছিলেন। তার সময়ে এখানে জাতীয় পার্টির স্বর্ণযুগ অতিবাহিত হয়েছে। তার সাথে একটা সময় এখানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এডভোকেট সালাউদ্দিন খান স্বপন। তবে এখন কোথাও তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। একসময়ের জাতীয় পার্টির নেতা কাজী জাফরের হাত ধরে এডভোকেট মুজিবুর রহমান জাতীয় পার্টিতে আসেন। এর আশির্বাদে তিনি সেই সময়টাতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচেনে তিনি মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিলেও বিজয়ী হতে পারেননি। পরে এরশাদের জাতীয় পার্টি ছেড়ে তিনি কাজী জাফরের জাতীয় পার্টিতে ফিরে যান। বর্তমানে তিনি মজলুম নেতা মাওলানা ভাসানীর ব্যানারে রাজনীতির চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির রাজনীতি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে ময়দানে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছে।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন থেকে আগামীতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন এ.এম.আরিফ উজ জামান দিদার। সেই লক্ষ্যে জাতীয় পার্টির সমর্থন আদায়ে তিনি কাজ করছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা সেমিনার করছেন।