নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বাজার থেকে দুয়াল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ রাস্তার বেহাল দশায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষ। দুয়াল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ১/২ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা বেহাল। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। গ্রামের প্রায় মানুষ এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার সময় বৃষ্টির পানিতে রাস্তার দু’ধারের মাটি সরে গিয়ে রাস্তাটি ভেঙে পড়েছে। পায়ে চলার পথ যেন মরণ ফাঁদ। এছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি ও মোটরসাইকেল আরোহীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু গাড়িচালক নয়, পথচারীদের জন্যও দুর্গম হয়ে উঠেছে এ রাস্তাটি। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। এমনকি বর্ষায় রাস্তাটির কিছু কিছু জায়গা পানির নিচে তলিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।
বেজগাঁও ১নং ওয়ার্ডের উত্তর পাশে গ্রামের প্রায় ২০০টি পরিবারের প্রধান রাস্তাটি মাটির ও আধাপাকা হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদা হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গ্রামের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় গ্রামের মানুষকে বছরের পর বছর ধরে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে একাধিক স্থানে ছোট-বড় খানাখন্দে পরিণত হচ্ছে রাস্তাটি। অনেক জায়গায় রাস্তার দুই ধারের মাটি সরে গিয়ে রাস্তা ভেঙ্গে পড়ছে।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে। ইউনিয়নের বিভিন্ন বড় রাস্তাসহ অনেক ছোটখাটো রাস্তা পাকাকরণ করলেও এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পাকাকরণ তো দূরের কথা রাস্তায় মাটি ভরাট করে উঁচু করা হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেন্টু শেখ জানান, গ্রামের বাজার থেকে দুয়াল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এই রাস্তা এতটাই খারাপ যে ভ্যানগাড়িসহ ছোট বড় একটা গাড়িও ঢুকতে সাহস পায় না। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই গাড়িতো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায় না। আমরা রাস্তার সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধির শরণাপন্ন হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। আমাদের রাস্তার করুণ অবস্থা দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা শুকচাঁন মন্ডল জানান, দীর্ঘদিনেও রাস্তা উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয়নি। তাই যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল করাই কঠিন। রাস্তার বেহাল দশার কারণে স্কুলের শিক্ষার্থীদের চরম কষ্টে প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। রাস্তাটির সংস্কার হলে প্রাথমিক শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের মানুষের চলাচলের পথ সুগম হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর মাতা জানান, আমার সন্তান নিয়ে প্রতিদিন আসি। ভয় হয় চলাচল করতে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার শিকার যদি হই।
এ রাস্তাটি মেরামতের অভাবে এখন চলাচলের অযোগ্য। মেরামত করে চলাচলের যোগ্য করে তোলার প্রত্যাশা স্থানীয়দের এবং এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।
স্কুল কমিটির সাবেক সভাপতি মো. সুজন হাওলাদার জানান, রাস্তাটি বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং বরাদ্দ পেয়েছি। তবে কবে কাজ শুরু হবে তা বলতে পারবো না।
বেজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য মো. ওবাজ্জল শেখ বলেন, বরাদ্দ পেয়েছি। কাজ হয়ে যাবে। তবে কবে শুরু হবে বলতে পারি না।
দুয়াল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, এ রাস্তাটি সংস্করণের জন্য অনেককেই বলেছি। তবে সকলে বলে হবে, তবে হয় না। মনে হয় অদৃশ্য কোন কারণে কাজ হচ্ছে না। আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে।
বেজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক ইকবাল মৃধা বলেন, রাস্তাটি আমি নিজে গিয়ে দেখেছি সংস্করণের দরকার। আমি আবেদন করেছি তবে বরাদ্দ পাইনি। এছাড়া বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে অর্থ নেই। তবে আমি এতটুকু বলতে পারবো, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ রাস্তাটির কাজ আগে করা হবে।
লৌহজং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা. সাজেদা সরকার এবং লৌহজং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন উপ-প্রকৌশলী মো. জয়েন আলী বদলিজনিত কারণে তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমানে অস্থায়ী দায়িত্বে থাকা টঙ্গীবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এখন কিছুই বলতে পারবেন না বলে জানান। তিনি জানান, আমাকে কাগজপত্র দেখতে হবে।