নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবৈধ একটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ভেজাল পণ্য। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুকৌশলে বিক্রি করা হচ্ছে এই সকল ভেজাল পণ্য যা কিনে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তারা।
সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন টেঙ্গারচর ইউনিয়নের বিশদ্রোন ভাটেরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেমি পাকা একটি ভবনে ভারতীয় জনপ্রিয় টাইলস ক্লিনার VIXOL এবং দুবাই থেকে উৎপাদিত RAK CONMIX টাইলস পুডিং, লায়ন হোয়াইট সিমেন্টসহ আরো কিছু জনপ্রিয় পণ্যের ভেজাল তৈরি করা হচ্ছে। দেখা গেলো কারখানাটিতে অভিজ্ঞ কোন কেমিস্ট নয় কাজ করছেন কয়েকজন যুবক। তাদের কেউ এসব পণ্য তৈরি করছেন, কেউ আবার প্যাকেজিং করছেন। তাদের মধ্যে একজন জানালেন, স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য জিল্লুর রহমানের ছত্রছায়ায় জয়দীপ বর্মণ নামে একজন এই কারখানা পরিচালনা করে থাকেন। এসব পণ্যের মোড়ক চেক করে দেখা যায়, পূর্ব থেকে উৎপাদনের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থান দেখানো হয়েছে ভারত এবং দুবাইয়ে। গত চার বছর ধরে তাদের কারখানার কার্যক্রম চলছে বলে জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, এখানে ড্রাম ভর্তি করে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল আনা হয়। ছোট্ট একটি বাসায় উৎপাদন করা হয় বিভিন্ন রকমের পণ্য। এসিডসহ যেসকল কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা অত্যন্ত দাহ্য। বিষয়টা নিয়ে আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজন বলেন, এগুলো নকল পণ্য তা আমরা সবাই জানি। এসকল পণ্য বিপণনে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে। তাদের নিজস্ব লোকজন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে এ সকল পণ্য বিক্রি করে যা কিনে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।
কারখানার পরিচালক জয়দীপ বর্মণ বলেন, আমরা যা করছি এখানে কোন কিছু অন্যায় করা হচ্ছে না। সবার চোখের সামনে আর নিয়ম মেনে এখানে এসব পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। কেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মোড়কে তাদের পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসকল মোড়ক আমি ঢাকা থেকে কিনে এনে ব্যবহার করছি। আমার মত অনেকেই এই কাজ করে থাকে। এখানে কোন অন্যায় হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক সাবেক সেনা সদস্য জিল্লুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সবার চোখের সামনে দীর্ঘদিন ধরে আমি কারখানা পরিচালনা করছি। এটা যদি অন্যায় হতো তাহলে এতদিন আমি কারখানা চালাতে পারতাম না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোকাররম হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। এই কারখানাটির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আমি নিজেও বেশ কয়েকবার তাদের এই কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। যদি এ ধরনের কর্মকান্ডে তারা জড়িত হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।