চার সন্তান নিয়ে উৎকন্ঠায় বিধবা, ৬ মাস ঘুরে সাহায্য পেয়েছেন ৫ কেজি চাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল গ্রামের গৃহবধূ রুবিনা (৩০)। পদ্মা নদীতে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার গারুরগাঁও গ্রামের স্বামীর বসতভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়ে গেলে রুবিনা দম্পত্তি বিগত কয়েক বছর আগে জমি ভাড়া নিয়ে বসতি স্থাপন করেন উপজেলার হাসাইল গ্রামে। কিন্তু তারপরেও গত কয়েকমাস আগেও দিন মজুর স্বামী নিয়ে সুখে সংসার ছিলো তার।
গত বছর (২০১৯) ঈদ উল আযহার দিনে স্বামী আব্দুল বেপারী হঠাৎ করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পরপারে পাড়ি জমান। স্বামীকে হারিয়ে ছোট চার সন্তান নিয়ে শুরু হয় তার চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন। স্বামীর মৃত্যুর পর বহুবার চেয়ারম্যান মেম্বার এর কাছে গিয়ে গত ৬ মাস ঘুরে সাহায্য পেয়েছেন মাত্র ৫ কেজি চাল। অর্ধাহারে অনাহারে ৪ সন্তান নিয়ে কাটছে তার জীবন। বাধ্য হয়ে রুবিনার বড় সন্তান হৃদয়কে (১২) ঢাকায় একটি দোকানে সেলসম্যানের কাজে দিয়েছেন। প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা বেতন পায় হৃদয়। এই দুই হাজার রোজগারের টাকায় খেয়ে না খেয়ে আরো তিন সন্তান নিয়ে দিন কাটছে রুবিনার। ওই টাকার মধ্যে থেকেই দিতে হয় বসত বাড়ির ভাড়ার টাকাও। কিন্তু করোনার কারণে দোকান বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে ছেলের মাসে ২ হাজার টাকা রোজগারের ব্যবস্থাও। তাই বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সাহায্য পাচ্ছেন না তিনি।
হাসাইল-বানারী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদার ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আফজাল মেলকারের কাছে বহুবার ধন্যা দিয়েও মাত্র একবার পাঁচ কেজি চাল ছাড়া কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাননি ওই গৃহবধূ। গৃহবধূ রুবিনা জানান, একটু সাহায্যের আশায় বহু মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। চার সন্তান রেখে স্বামী মারা গেলে কত কষ্টে যে দিন কাটাই এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। রুবিনার দ্বিতীয় সন্তান রিয়া মনি (১০), তৃতীয় সন্তান রমজান (৭) ও ছোট সন্তান রাব্বিকে (৪) নিয়ে তিনি হাসাইল গ্রামে ইউপির সদস্য আফজাল মেলকারের বাড়ির পার্শ্বে একটি ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু গত ২ দিন আগে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ঘরের চাল নড়বড়ে করে দিয়ে গেছে। সামনের কাল বৈশাখী একটু বেশি ঝড় হলেই ঘরটি উড়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছে সে।
সাহয্যের আশায় বারবার ওই ওয়ার্ড সদস্যের কাছে গেলে দিবে বলে এখন অব্দি আর কোন সাহায্য সহযোগিতা দেননি। সাহায্যের জন্য তিন চার মাস আগে তিনি ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি হাসাইল ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হালদার এর কাছে দিয়ে আসলেও তিনি কোন ত্রাণ সহায়তা বা অনুদান দেননি।
এ বিষয়ে হাসাইল-বানারী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদার জানান, গৃহবধূ রুবিনা হাসাইল গ্রামে বসবাস করলেও সে পার্শ্ববর্তী পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ভোটার। তবুও আমি তাকে গতবছর দশ পনের কেজি চাল দিয়েছিলাম। তবে সামনে কোন ত্রাণ অনুদান আসলে তাকে আবার দেব।