শামীমা নাসরিন : প্রায় ৫ হাজার আজীবন সদস্যবিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সমিতির সদস্যদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান কার্যকরী পরিষদের কমিটি ২ বছর মেয়াদে ২০১০ সালে গঠিত হয়। অথচ এই কমিটি একাধারে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত ১৭ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় র্যাংগস টাওয়ার বিজয় স্মরণীর থাই চাই রেস্টুরেন্ট এন্ড ক্যাফেতে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী নির্বাহী কমিটির মধ্যে ১৮ জন কার্যকরী নির্বাহী কমিটির সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভার আলোচ্য সূচী ছিল নির্বাচন সংক্রান্ত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, উক্ত সভায় ২০ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি, প্রধান উপদেষ্টা এবং চারজন উপদেষ্টা গঠন করা হয়। উক্ত কমিটিতে বর্তমান কার্যকরী পরিষদের ১২ জনই রয়েছেন। অথচ মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে নির্বাচনবিহীন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সদস্যদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।
অপরদিকে এই কমিটি নির্বাচন পরিচালনা কিংবা কোন সাব কমিটি গঠন হয়েছে কি না তা সভার কোন আলোচ্য সূচীতে উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া বর্তমান কার্যকরী পরিষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে কি না তাও পরিষ্কার নয়। গঠনতন্ত্রের ২০ ধারায় উল্লেখ রয়েছে- যেকোন কারণে কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ পূর্তির পূর্বে পরিষদ বিলুপ্ত হলে একজন আহ্বায়ক ও একজন সদস্য সচিবসহ ৯ বা ১১ সদস্যবিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করতে হবে। তদারকি ও পরিচালনার জন্য এডহক কমিটি সমিতির সকল দায়িত্ব বুঝে নিবে।
গঠনতন্ত্রের ২১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে- দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার ন্যূনতম ৬ সপ্তাহ পূর্বে কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। একজন চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য সচিবসহ মোট ৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের আয়োজন ও পরিচালনা করবেন এবং এতদসংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন ও জারী করবেন।
কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ইদ্রিস মিয়াজী মোহন জানান, সমিতির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করলে সকল নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের আলোচ্যসূচীতে এডহক কমিটি গঠন সংক্রান্ত নোটিশ প্রদান করা উচিত ছিল।
আজীবন সদস্য মোঃ রিপন জানান, গঠনতন্ত্রের ২১ ধারা মোতাবেক দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার ন্যূনতম ৬ সপ্তাহ পূর্বে কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত ছিল।
অপরদিকে, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির আজীবন সদস্য মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি মহোদয় বরাবর গত ২৭ এপ্রিল গঠনতন্ত্র বহির্র্ভূত আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
উক্ত অভিযোগে তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারি যে, নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ের আলোচ্য সূচী নির্ধারণ করে কার্যনির্বাহী কমিটির গত ১৭ এপ্রিল মিটিংয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে কমিটির প্রায় সকলকেই রেখে সমিতির সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা হয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন; যা আজীবন সদস্য হিসেবে আমাকেসহ হাজার হাজার সদস্যদেরকে না জানানোর কারণে আমার এবং সকল আজীবন সদস্যদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। মূলত একটি কমিটি বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা যায় না। সমিতির গঠনতন্ত্রের ২০ (ক) ধারা মতে, সাধারণ সদস্যদের উপস্থিতিতে এডহক কমিটি গঠন করা যায়, কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি নয়। তাছাড়া কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে -এ ধরনের কোন ঘোষণা আমরা কোথাও দেখতে পাইনি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল গঠনকৃত কমিটি বিগত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজেদের নিয়েই নতুন কমিটি গঠন করেছেন ; যা ইসি কমিটির মাধ্যমে ক্ষমতাটা মূলত নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছেন। এতে সাধারণ ভোটাররা চরমভাবে অপমানিত হয়েছেন। এ ধরনের কার্যকলাপ মোটেই গঠনতন্ত্র সম্মত হয়নি।
সমিতির সদস্যরা মনে করেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন হলে সকলের সম্মান অক্ষুন্ন থাকবে।