মোঃ মোস্তফা : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায় নতুন ওসি আসলেই তার জন্য আকর্ষণীয় গিফট নিয়ে হাজির হয় থানায়। যেকোনোভাবে তাকে ম্যানেজ করতেই হবে। কারণ কবিরাজির মূলমন্ত্র পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করা। এমনই অভিযোগ রয়েছে- মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের রশুনিয়া গ্রামের শাহজালাল পান কবিরাজের বিরুদ্ধে। সে জ্বিন দিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে তার খপ্পরে ফেলেছেন বহু মানুষকে। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার লোকজনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, শাহজালাল পান কবিরাজ দীর্ঘদিন যাবৎ সংসারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, বন্ধ্যাত্ব, পছন্দের মানুষকে পাইয়ে দেওয়া, অবাধ্য সন্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনাসহ নানাবিধ সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছিলেন। এ কাজে তার কাছে থাকা জ্বিন তাকে সহযোগিতা করে বলে তিনি রোগীদেরকে বোঝাতেন। এসব ক্ষেত্রে তিনি প্রতারণার অংশ হিসেবে প্রতিদিন তার নিজ বাড়িতে আসন বসান। এসময় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যারা আসেন তাদের কারো বাড়িতে শত্রুতাবশত তাবিজ, কারো বাড়িতে পুতুল পুঁতে রাখা আছে এবং এ কারণেই বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে জ্বিনের সাহায্যে এসব তাবিজ বা পুতুল তুলে এনে সমস্যার সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এজন্য তিনি মোটা অংকের টাকা ও ৮/১০ হাজার টাকার মালামাল নেন। এরপর বাড়ি বন্ধ করার জন্য মোটা অংকের টাকা, তাবিজ দেয়ার জন্য টাকা এবং জনপ্রতি ১২০ টাকা করে নজরানা ফি নেন। কিন্তু জ্বিনের মাধ্যমে তাবিজ-কবজ তুলে আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণা। তার প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ রয়েছে সিরাজদিখান থানায়। তার বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে চলমান মামলাও রয়েছে। একাধিক নারীর সাথে পরকীয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতি রাতে নারীদের নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পান কবিরাজের আপন ভাই জি এম শাহআলম রশুনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি। পান কবিরাজ নিজে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী-পুত্রের নির্বাচনীয় প্রচারণায় বহু টাকা খরচ করেছেন। রশুনিয়া স্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের অফিস পরিচালনা করতেন তার দুই ভাই। যত প্রতারণা আর ভন্ডামি সবই ধুয়ে মুছে যেত আওয়ামী লীগের নামের উপরে। গত ২০২৪ সালে কবিরাজির নামে কোরআন অবমাননার কারণে তার আস্তানাসহ বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলে এলাকাবাসী। তারপর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বাড়িতে উঠেছেন। আবারো আসন পেতে বসেছেন আগের রূপ নিয়ে।
রশুনিয়া স্ট্যান্ডে চায়ের স্টলসহ একাধিক লোকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পান কবিরাজ কোন লেখাপড়াই করেন নাই। কিছুদিন আগেও কারেন্টের লাইনম্যান ছিলেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার লাগাতেন। কারেন্টের খুঁটি দেওয়ার কথা বলে একাধিক লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পালিয়ে থাকতে থাকতেই তিনি প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে কবিরাজ বনে যান। তার বিষয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সিরাজদিখান থানার সদ্য বিদায়ী ওসি শাহেদ আলম মামুনকে ল্যাপটপ উপহার দিয়ে তার সাথে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিয়ে এবং তার বাড়িতে আসা লোকজনকে ভয় দেখিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নামধারী কিছু গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি মাসে মাসোহারা দেন তিনি।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার বলেন, এর আগে তার বিরুদ্ধে আভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিরাজদিখান থানার ওসি শাহেদ আলম মামুনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কি-না তা আমাকে আর জানাননি। ওসি ল্যাপটপ নিয়েছেন কি না তা আমার জানা নেই। আমি এ বিষয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেব।