নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা ২০ দিন ভোগান্তির পর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় বৈধ গ্রাহকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও গ্যাসের বিল ৮ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ৭টার পর গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ও ভবেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, আবাসিক, শিল্প এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে গজারিয়ায় তিতাসের গ্রাহক রয়েছে ১১ হাজারের মতো। কিন্তু সেখানে এর পাঁচ গুণ গ্রাহক রয়েছে তাদের কারও বৈধ সংযোগের কাগজ নেই। তিতাস কর্তৃপক্ষ বারবার অভিযান চালিয়েও কোনো সুরাহা করতে না পারায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে গত ৫ মার্চ বাউশিয়া ইউনিয়নের দড়ি বাউশিয়া এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে তিতাসের লোকজন। ওইদিন একপর্যায়ে স্থানীয়রা গ্যাসের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দড়ি বাউশিয়া এলাকা অবরোধ করে।
তিতাসের মেঘনা আঞ্চলিক বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গজারিয়ার একাংশে গ্যাস সরবরাহ লাইন বন্ধ করা হয়েছিল। ওই এলাকায় গ্যাসের বকেয়া বিল আছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। বকেয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিয়েও কাজ হয়নি। অবৈধ সংযোগ কেটে দিয়েও কাজ হয় না, কেটে দিলেই পরদিন আবার তা স্থাপন করে ফেলে। এসব কারণে খুবই অস্বস্তিতে আছি। গত শনিবার রাত সাড়ে ৭টার পর গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ও ভবেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় একাধিক গ্রাহক জানায়, টানা ২০ দিন পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় গজারিয়ায় থাকা ২ হাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এর আগে গ্যাস সংযোগ পেতে মহাসড়কে আন্দোলনে নামে তারা। এতে উভয় মুখে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মহাসড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বললে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এএসপি ও থানার ওসিসহ ৮ পুলিশ সদস্য এবং আন্দোলনকারী ১৮ জন নারী-পুরুষ আহত হয়। এ ঘটনায় গত ৬ মার্চ পুলিশ বাদী হয়ে ২ হাজার জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করে। গত ১১ মার্চ বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়া ও বক্তারকান্দী এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে তিতাস অভিযান পরিচালনা করে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করে। ফের গত ১৪ মার্চ গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করে তিতাস। এসব লাইনের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৭শত অবৈধ আবাসিক সংযোগ, একটি ঢালাই লোহা কারখানা এবং তিনটি রেস্টুরেন্ট চলতো বলে জানায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ শনিবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গজারিয়ার মানুষ অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করবে না এমন নিশ্চয়তা দিলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ গত শনিবার সন্ধ্যায় গ্যাস সরবরাহ চালু করে।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার জানান, অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এখন শুধু বৈধ লাইন চলবে। গত শনিবার রাত সাড়ে ৭টার পর গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ও ভবেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় বৈধ গ্রাহকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।