নিজস্ব প্রতিবেদক
দখল দূষণে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ঐতিহ্যবাহী ভাগ্যকুলের বড় খাল। খালের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বাঁধ নির্মাণ ও অনেকাংশে ঘর-বাড়ি উত্তোলন করে দখল নিয়েছে খালের পাড়ে বসবাসকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণের ফলে খালের ছোট ছোট অংশে কেউ কেউ ময়লা ও গরুর খামারের গোবর ও বিষ্ঠা ফেলে স্তুপে পরিণত করেছে। এ স্তুপ থেকে বাতাসের সাথে দুর্বিষহ দুর্গন্ধ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার ফলে এলাকায় অসুস্থ রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। জানা যায়, উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের ভাগ্যকুল বাজার সংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে ঐতিহ্যবাহী ভাগ্যকুল বড়খালটি ভাগ্যকুলের উত্তর মান্দ্রা গ্রাম, রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাশুর বাগানবাড়ী, বৌবাজার, বানিয়াবাড়ী ও উত্তর বালাশুর বাঘাডাঙ্গা গ্রাম হয়ে আড়িয়াল বিলের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে পতিত হয়। ভাগ্যকুল মান্দ্রা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাসুজ্জামান বলেন, এখানে একসময় ডিঙ্গি, গয়না, ঘাসি, লঞ্চ, স্টিমারসহ ছোট বড় নৌকা দিয়ে বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের মানুষ নৌপথে রাজধানীর ঢাকাতে যাতায়াতসহ ব্যবসায়ীরা ভারী মালামাল আনা নেয়া করত। পদ্মার পানি এ খালে বহমান থাকাকালে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছসহ ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। দখল দূষণে ও ময়লার ভাগাড়ে আজ এ খালটি ময়লার স্তুপে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ খালের ভাগ্যকুল বাজার অংশে বিল্ডিংসহ ঘর উত্তোলন করে দখলে নিয়েছে মোহাম্মদ আলী ফরাজী, সিরাজ বেপারীসহ অনেকেই। ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠের পূর্বপাশে খালের অংশ পুরো ভরাট করে ভাগ্যকুল স্কুল এন্ড কলেজ মার্কেট, তিনকন্যা মার্কেট, ভাগ্যকুল ইয়াং মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ও বিল্ডিং উত্তোলন করে দখলে নিয়েছে সোহেল সরদার, কায়েশ হাওলাদারসহ স্থানীয়রা। ভাগ্যকুল জনতা ব্যাংক শাখার সামনে আঃ রশিদ খান বাঁধ নির্মাণ করে এবং উত্তর মান্দ্রার দক্ষিণ পাশে খালের মধ্যে টিনের ঘর দরজা উত্তোলন করে দখল নেয় তোতা সারেং, জুনু রাজবংশী, মিথুন রাজবংশী ও নিতাই রাজবংশী। উত্তরমান্দ্রা খালের অংশে গরুর খামারে গোবর ও বিষ্ঠা ফেলে ময়লার স্তুপে পরিণত করেছে ঐ গ্রামের সুজন সারেং, লিওন সারেং ও সুলতান সারেং গং। খালের উপর দেওয়াল নির্মাণ করে ও গরুর খামার নির্মাণ করে খামারে গোবর বিষ্ঠা ফেলে দখল নেয় বাগানবাড়ীা রফিক বেপারী, কালাচাঁন ও লিটন গং। বালাশুর বৌবাজার শ্রীনগর দোহার আন্তঃসড়কের দক্ষিণ পাশে খালের অংশে মার্কেট নির্মাণ করে এবং উত্তর পাশের অংশে হোটেল, সেলুন ঘর নির্মাণ করে দখল নেয় হানিফ মেম্বার ও রোমান। বালাশুর বৌবাজারে অস্থায়ী বাজার বসিয়ে বাজারে মৃত মুরগী ও ময়লা আর্বজনা ফেলে এবং বাঁধ নির্মাণ করে দখল নেয় বানিয়াবাড়ীর কফিল বেপারী, সেকান্দার ভিস্তিসহ সেলিম মোল্লা গং। এভাবে দখল দূষণে ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে ভাগ্যকুল বড় খালটি এখন মৃতপ্রায়। বালাশুর বৌবাজারের আজকার ফার্মেসীর মালিক মোবারক হোসেন বলেন, খালটি স্থানীয়রা দখল করে নিয়ে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। এই ময়লার ভাগাড় থেকে এত দুর্গন্ধ বের হয় যে এখানে সপরিবারে বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কফিল বেপারী এখানে অনুমতিহীন একটি বাজার বসায়। বাজারের ব্যবসায়ী কসাই ছালাম গরুর বিষ্ঠা ও হালিমের দোকানদার মোবারক মৃত মুরগীসহ বাজারের দোকানদারদের যত ময়লা এখানে ফেলার কারণে দুর্বিষহ দুর্গন্ধ বের হয়।
বৌবাজারে অস্থায়ী বাজার বসিয়ে বাজারের ময়লা আর্বজনা ফেলে খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করার ব্যাপারে বাজার মালিক কফিল বেপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চলতে পারি না। তাই অনুমতি ছাড়া বাজার বসিয়েছি। ময়লা ফেলে খাল দখলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সবাই খাল দখল করছে আমিও করছি।
খাল দখলের ব্যাপারে ভাগ্যকুল ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন শাহাদাত বলেন, খালটি চলমান না থাকায় সাবেক এমপি ভাগ্যকুলের মনির হোসেন মিটুল নেতাকে দিয়ে খাল ভরাট করিয়ে মার্কেট নির্মাণ করেছেন।
বাঁধ নির্মাণ করে ময়লার ভাগাড়ের স্তুপ করে খাল দখলের ব্যাপারে রাঢ়ীখাল ইউপি চেয়ারম্যান বারেক খান বারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি ও ভাগ্যকুলের চেয়ারম্যান মিলে আলোচনার মাধ্যমে খননের চেষ্টা চালাচ্ছি। শ্রীনগর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ব্যারিস্টার সজীব আহম্মেদ বলেন, ইতিপূর্বে ভাগ্যকুলের নাগরনন্দীসহ উপজেলার খালগুলো উদ্ধারের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। তন্মধ্যে এই খালটিও রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়নের বোর্ডের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।