নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে গভর্নিং বডির নির্বাচনের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে নির্বাচনের প্রচারণার জন্য নির্ধারিত সময় বিধির চেয়ে কম থাকায় তা পরিবর্তন করে ২৩ জানুয়ারি করা হয়। নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ আলম ডাবলু ও সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম সবজল প্যানেলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এর বাইরেও সতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সম্প্রতি নির্বাচনে অংশ নেয়া দুইটি প্যানেলের কর্মী সমর্থকদের মাঝে হাতাহাতি ও একাধিকবার হুমকির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও মাকসুদ আলম ডাবলু প্যানেলের লোকজনের বিরুদ্ধে শামসুল আলম সবজল প্যানেলের প্রার্থী এটিএম মাসুদকে লাঞ্ছিত ও তার বড়ভাই মোতাহার মাষ্টারের কাছ থেকে ভোটার লিস্ট ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে গত ৩ জানুয়ারী বর্তমান গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে দাতা ভোটার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মো. আজিজুল। জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারী বুধবার নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন মাকসুদ আলম ডাবলু প্যানেলের ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজের বিদ্যোৎসাহী সদস্য জানে আলম ও সবজল প্যানেলের সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদ সরদারের মাঝে হতাহাতির ঘটনা ঘটে। গত রবিবার বেলা ১১টায় ভাগ্যকুল ইউনিয়নের দক্ষিণ মান্দ্রা এলাকার শাজাহান খানের ছেলে মোঃ সুমন নামে এক ব্যক্তিকে হামলা করে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মাকসুদ আলম ডাবলুর বড় ভাই শামসুদ্দিন বাবুলের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে হামলার শিকার মোঃ সুমন বলেন, গত রবিবার বেলা ১১টার দিকে মাকসুদ আলম ডাবলুর বড়ভাই বাবুল আমাদের বাসায় ভোট চাইতে আসে। তখন তারা সবজল এর বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলতে থাকে। আমি বলি আপনারা ভোট চাইতে আসছেন ভোট চান অন্যের বদনামের কি দরকার। তখন শামসুদ্দিন বাবুল তার সাথে থাকা লোকদের বলে ধর শালারে আজকে ওরে তুইলা নিয়া যামু। এই কথা শুনে তার সাথে থাকা জাকির, স্বপন, জালাল, লাভলু সারেং, লিনজু সারেং মিলে আমাকে মারধর করে ও আমার অসুস্থ মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তাদের ধস্তাধস্তিতে আমার স্ত্রী পায়ে ও হাঁটুতে আঘাত পায়। তারা আমাকে অনেক মারধর করে তাতে আমার কানের কাছে কেটে যায়। আমি এলাকায় ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খেয়েছি। এ বিষয়ে সামসুদ্দিন বাবুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলেটির কথাবার্তা ভালো না। আমার সাথের লোকজন একটু উত্তেজিত হয়েছিল। কিন্তু মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। এলাকাবাসী জানায়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে উভয় গ্রুপের কর্মী সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ রাখতে শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ইস্যু করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান তালুকদার বলেন, নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। শুনেছি যাচাই-বাছাইয়ের দিন দুইপক্ষের উত্তেজনার ঘটনায় একজনকে কয়েক ঘন্টা এসিল্যান্ড অফিসে আটক রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ভিতরের পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। ভাগ্যকুল ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মনোয়ার হোসেন শাহাদাত বলেন, এলাকায় উভয়পক্ষের উত্তেজনার কথা শুনে আমি দুইপক্ষের লোকজনকে ডেকে সাবধান করে দিয়েছি। তারা যেন কারো সাথে কোন সংঘাতে না জড়ায়। যদি কেউ সংঘাতে জড়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুরাইয়া আশরাফী বলেন, এ বিষয়ে আমি ডাক ফাইলে কোন অভিযোগ পাইনি। নির্বাচন বিষয়ে সকল দায়িত্ব উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমির। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজিব আহম্মেদ জানান, আমি যাচাই বাছাই করে প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেছি। উত্তেজনার বিষয়ে আমার জানা নেই। আর এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগও করেনি। আমি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যে ধরনের কার্যক্রম প্রয়োজন সে ধরনের কার্যক্রম নিচ্ছি। এতটুকু বলতে পারি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষই হবে। করোনার পরিস্থিতির কারণে সরকার কোন নির্দেশনা না দিলে আগামী ২৩ জানুয়ারিই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।