নিজস্ব প্রতিবেদক
সয়াবিন যুগের প্রচলন আর মানুষের অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই ভেন্না। “বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটু খানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি” পল্লীকবির বিখ্যাত আসমানী কবিতায় খোঁজ পাওয়া যায় গ্রামের এক অতি সাধারণ তেল ভেন্না। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের তালিকায় ভেন্না একটি পরিচিত নাম। একসময় মুন্সীগঞ্জের প্রায় এলাকার ঝোপঝাড় ও বাড়িঘরের আশপাশে প্রচুর ভেন্না গাছ দেখা যেত। ভেন্না তেলের অপর নাম ক্যাস্টর ওয়েল। একসময় ভোজ্যতেল হিসেবে এর চাহিদাও কম ছিল না। ভেন্না আমাদের দেশের গরিব মানুষের ভোজ্যতেল। এছাড়া রোগব্যাধি নিরাময়ে এ তেল ব্যবহার করা হয়। ভেন্নার গাছ জ্বালানি হিসেবে, বাড়ির আঙ্গিনার বেড়া ও সবজির মাচায় ব্যবহার করা যায়।
উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার ঝোপঝাড়ের মাটি ভেন্নার জন্য খুবই উপযোগী। এ অঞ্চলে ভেন্না চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ জেলা থেকে ভেন্না হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে সয়াবিন তেলের প্রচলনে আগের মতো ভেন্নার কদর নেই। অথচ সয়াবিন তেলের তুলনায় ভেন্না তেলের পুষ্টিমান কোনো অংশেই কম নয়। উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে যাবে। ভেন্না তেলের অপর নাম ক্যাস্টর ওয়েল। ভেন্না গাছ গজানোর পর দেখতে অনেকটা পেঁপে গাছের মতো। সবচেয়ে বড় পাতা জাতের উদ্ভিদগুলোর মধ্যে একটি হলো ভেন্না গাছ। গাছগুলো ছয় থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গজানোর সময় কোনো শাখা-প্রশাখা থাকে না। একটু বড় হলে শাখা-প্রশাখায় চারদিক ছড়িয়ে যায়। ভেন্না বিনা চাষেই বর্ষাকালে গজায় এবং হেমন্ত ও শীতকালে ফুল ও ফল ধরা শুরু করে। অনুকূল পরিবেশ পেলে সারা বছরই ফল ধরে। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বোম্বাই ও স্থানীয় জাতের ভেন্নাই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়। গাছগুলো সাদা ও লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। গিটাযুক্ত গাছের পাতায় আট-দশটি কোনাযুক্ত পাতা মানুষের হাতের মতো ছড়ানো থাকে। পাতাগুলো ছয় থেকে আট ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের বয়স দুই থেকে তিন মাস হলে শাখায় শাখায় ফুলের কাঁদি হয়। প্রতিটি ফুলের ছড়ায় দেড় থেকে দুই শতাধিক পর্যন্ত ফল ধরে। প্রত্যেক ফলে তিন-চারটি বীজ দানা হয়। কিছুদিন পর ফলগুলো পাক ধরলে হাল্কা কালচে বর্ণের হয়। তখন গাছ থেকে ছড়ি থেকে ফল ছাড়িয়ে নিয়ে রোদে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজগুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে সরিষা, তিল অথবা তিসির সাথে মেশিনে ভাঙিয়ে ভোজ্যতেল তৈরি করা যায়। মেশিনে না ভাঙিয়ে পাতিলে পানি নিয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে পাটায় পিষে পুনরায় পানিতে জ্বাল দিয়েও ভেন্নার তেল তৈরি করা যেতে পারে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ভেন্নাকে করা যেতে পারে এক সম্ভাবনাময় তেল ফসল হিসাবে। যাতে করে আমদানি নির্ভর তেলের চাহিদা অনেকাংশ পূরণ করতে পারে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া তেল ফসলকে আলোচনায় নিয়ে আসা সম্ভব।
ভেন্না তেলের অপর নাম ক্যাস্টর ওয়েল তেলের ভেন্না এখন বিলুপ্তির পথে
আগের পোস্ট