নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে চুরির অপবাদ দিয়ে ৩ যুবককে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার দিবাগত রাত পৌণে ২টার দিকে উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম নওপাড়া গ্রামে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। সকালে স্থানীয়রা আহত যুবক আহম্মদ উল্লাহ (৩২), জাহাঙ্গীর (২৮) ও নাজমুল (২৬)কে আতাউর শেখের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করলে আহম্মদ উল্লাহর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। আহত আহম্মদ উল্লাহ উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের ওয়াসেক মোল্লার ছেলে, জাহাঙ্গীর একই গ্রামের মতলব মল্লিকের ছেলে ও নাজমুল রুস্তমের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের মৃত জলিল শেখের ছেলে আতাউর শেখের ভেড়া চুরির অপবাদ দিয়ে আতাউর শেখ, ছেলে আলামিন, ভাই কাইয়ুম শেখ, ছেলে বাঁধন, মিজান, জুলহাস বেপারী ওরফে জুলু মাদবর, মৃত ইউনুছ শেখের ছেলে আমির হোসেনসহ ১০/১২ জন হাতে হাতুড়ি, লোহার পাইপ, কাঠের ডাঁসা ইত্যাদি নিয়ে গত সোমবার দিবাগত রাত পৌণে ২টার দিকে নাজমুলকে, রাত সোয়া ৩টার দিকে জাহাঙ্গীরকে এবং রাত ৪টার দিকে আহম্মদ উল্লাহকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কাইয়ুম শেখের বাড়িতে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আলামিন প্লাস দিয়ে আহম্মদ উল্লাহর হাতের আঙ্গুলের নখ তুলে ফেলে। এসময় আহম্মদ উল্লাহর বাবা মারধর করতে নিষেধ করলে তাকেও মারধর করবে বলে হুমকি দেয় আতাউর। পরে গত মঙ্গলবার সকালে নওপাড়া স্ট্যান্ডে আমির হোসেন, নাজিবর, জুলু মাদবর, শাজাহান বেপারী গং একটি সালিশ বৈঠক করে আহত ৩ যুবককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
স্থানীয় শাহাদাত মোল্লা বলেন, আমি রাতে ঘুমিয়েছিলাম। রাত সোয়া ৩টার দিকে হঠাৎ চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং উঠে গিয়ে শুনি আতাউর গংরা ভেড়া চুরির অপবাদ দিয়ে নাজমুল, জাহাঙ্গীর ও আহম্মদ উল্লাহদেরকে তুলে নিয়ে গেছে। পরে আমি ও আমার চাচাতো ভাই ওয়াসেক মোল্লা আমির হোসেনের বাড়ির সামনে যাই। ঐসময় আমি আমির ভাইয়ের সাথে কথা বলা অবস্থায় মিজান, আতাউর গং আহম্মদ উল্লাহ, জাহাঙ্গীর ও নাজমুলকে বেদম মারধর করে এবং কাইয়ুম শেখের বাড়িতে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে সকালে সালিশ করবে বলে। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি আহম্মদ উল্লাহকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আমি রাতে সবাইকে বলেছিলাম কেউ যাতে ওদেরকে মারধর না করে। তারা আমার কথা শোনেনি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আমির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার হুকুমে কোন মারধর করা হয়নি। আপনাদেরকে ভুল তথ্য দিয়েছে। উল্টো আমি মারধর করতে নিষেধ করেছি। ওদের ৩ জনকে আমার জিম্মায় রাখতে বলেছিল আহম্মদ উল্লাহর বাবা ও এলাকাবাসী। কিন্ত আমি জিম্মায় রাখিনি। তবে পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে কুকুটিয়া ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামের কাছে জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। কুকুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন বাবু বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। ব্যক্তিগতভাবে কোন সালিশ করলে আমার জানা নেই। ঘটনার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি এবং পরিষদেও আসেনি।