নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের চন্দনধূল এলাকায় গত ৬ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে চাঁদা না পেয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে ৪ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী বাদী হয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলী আদালত, মুন্সীগঞ্জ একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালতে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের চন্দনধূল গ্রামের মৃত শেখ বছির উদ্দিনের পুত্র মোঃ লাল মিয়া (৬২)র কাছে উপজেলার চন্দনধূল গ্রামের ইউসুফ মীরের পুত্র ১নং বিবাদী রাসেল মীর (৩২), মৃত- নীলকান্ত দে এর পুত্র ২নং বিবাদী রতন দে (৫৫), উপজেলার ইছাপুরা গ্রামের মৃত- মাহা শেখের ছেলে ৩নং বিবাদী ফারুক শেখ (৫৫), সামছুল শেখের পুত্র ৪নং বিবাদী বাবু (৩২) বাদীর কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সাথে অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জন ছিলো। বিবাদী গং চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু প্রকৃতির লোক। বিবাদীগণ এলাকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে চাঁদা দাবী করে বেড়ায়। বিবাদী খারাপ প্রকৃতির হওয়ায় বিবাদীদের উক্ত কাজে কেউ প্রতিবাদ করতে ও সাক্ষী দিতে পারে না। ঘটনার কিছুদিন পূর্বে বিবাদীগণ আমার বাড়িতে এসে আমাকে বলে, তোর ছেলেরা বিদেশ থাকে এবং তুই ব্যবসা করে ভালো টাকা-পয়সা কামাই করছস। এখানে বসবাস করতে হইলে আমাদের ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আমি বিবাদীদের বলি, আমি চাঁদার কোন টাকা-পয়সা দিতে পারবো না। একথা বলার সাথে সাথে বিবাদীগণ বলে, আমরা যেকোন দিন আসবো। চাঁদার টাকা রেডি রাখতে বলে তারা চলে যায়।
তৎপর ঘটনার দিন তারিখ ও সময়ে অর্থাৎ গত ৬ আগস্ট দুপুর দেড়টায় বিবাদীগণ পরস্পর যোগাযোগে দুরভীসন্ধি মূলে একই উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠি, লোহার রড, শাবল, ছুরি, বটি, কাঠের ডাঁসা নিয়ে আমার বাড়িতে এসে আমাকে আমার বসতবাড়ির সাথে পশ্চিম পাশের রাস্তায় আমাকে পেয়ে আমাকে ঘেরাও করে ১নং বিবাদী আমার গলায় ছুরি ধরে বলে, তোকে চাঁদার ২ লক্ষ টাকা রেডি রাখতে বলেছিলাম। এক্ষুনি আমাদের চাঁদার ২ লক্ষ টাকা দে। আমি বিবাদীদের চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে ৩নং বিবাদী হুকুম দিয়ে বলে চাঁদার টাকা না দিলে ওর বাড়িঘর ভাংচুর করে ওকে খুন করে ফালা। এই হুকুম পেয়ে ৪নং বিবাদী তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার পেটে নাভির উপরে কাটা রক্তাক্ত জখম করে এবং সমস্ত বিবাদীগণ আমার বসতবাড়ির পূর্ব ভিটির বিল্ডিংয়ের নীচতলার আমার বিল্ডিংলের দেয়ালসহ ৭টি জানালার ১৪টি থাইগ্লাস, ১২টি সিসি ক্যামেরা, ১টি সিঙ্গার এসি, ১টি গাজী পানির ট্যাংক, ১টি ফ্রিজ, ১টি আকাশ টিভির ডিস ভাংচুর করে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং আমার বসত বিল্ডিংয়ের আলমারির ভিতরে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং বিল্ডিংয়ে থাকা ১টি বাইসাইকেল, ১টি অপপো মোবাইল, ১টি স্যামসাং মোবাইল, সিসি ক্যামেরার সেটআপ বক্স, ১টি রাউটার, যাহার সর্বমোট মূল্য ৬ লক্ষ টাকা এবং মূল্যবান দলিলপত্র নিয়ে যায়। আমি ও সাক্ষীরা বাধা দিলে বিবাদীগণ আমাকে ও সাক্ষীদের কিল, ঘুষি ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে নীলাফুলা জখম করে। ২নং বিবাদী হত্যা করার উদ্দেশ্যে ২নং সাক্ষীকে মাথা লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করলে ইটের কোনা লেগে ২নং সাক্ষীর মাথার তালুতে কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। ৩নং সাক্ষী প্রাণের ভয়ে পাশের রাজনের বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নিলে বিবাদীগণ ৩নং সাক্ষীর মাথার চুল কেটে দেয় এবং কানে ধরে উঠ বস করায়। আমাদের ডাকচিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীগণ যাওয়ার সময় এই বলে হুমকি দিয়ে যায় যে, লোকজন আসাতে চাঁদার টাকা নিতে পারলাম না, সময় ও সুযোগমত পাইলে খুন করে হইলেও চাঁদার টাকা নিবো। যদি এই ব্যাপারে কোন মামলা করি বা বিচার চাই তাহলে আসামীগণ আমাদের খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। আমি ও আমার স্ত্রী ২নং সাক্ষীর অবস্থা খারাপ থাকায় আমরা সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করি এবং ৩-৪নং সাক্ষীদের স্থানীয় ফার্মেসী হতে ঔষধ এনে চিকিৎসা করিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট বিচার চাইলে বিবাদীগণ বিচার না মানায় আমি ও ৩নং সাক্ষী থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নেওয়ায় আদালতে মামলা করতে সামান্য বিলম্ব হয়।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।