নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে জমি না বুঝিয়ে দিয়ে হয়রানি, মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে। একই জমি একাধিক লোকের নিকট বিক্রি করে আবার নিজেদের মধ্যে আগেই লিখে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন উপজেলার কোলা ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামের কাজী আমিনুল হক (শাজাহান) ও তার ছেলে কাজী নাজমুল হক।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকার কাজী পরিবারের মধ্যে আমিনুল হক ও তার ছেলে নাজমুল হক এবং নাজমুলের স্ত্রী জয়নব আক্তার তারা মামলাবাজ, সামাজিকতা নাই তাদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরা একে অপরকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। বাবা বিক্রি করে জমি, ছেলে আটক দেয় এবং থানায় জিডিসহ আদালতে একাধিক মামলাও দিয়েছে ক্রেতাদের বিরুদ্ধে। ছেলের স্ত্রী ও কাজের মেয়ে দিয়ে নারী নির্যাতন মামলা করেছে জমি ক্রেতাদের বিরুদ্ধে। তাদের কাছ থেকে জমি কিনে বিপাকে পড়েছে একই গ্রামের সুজন লস্কর, লিটন বেপারী ও এমদাদুল হক।
ভুক্তভোগী সুজন লস্কর (৪৫) জানান, কাজী আমিনুল হকের নিকট থেকে ১২ শতাংশ জমি ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। গত মার্চ মাসে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন আমিনুল হক। আমিনুল হক বেশ কয়েকটি বিয়ে করেছে। ছোট স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা থাকেন তিনি। প্রথম স্ত্রী’র ছেলে নাজমুল এ গ্রামেরবাড়িতে থাকে। বাবা জমি বিক্রি করেছে আমার কাছে। ছেলে তা মানে না, এখন ছেলে আবার ১০ লাখ টাকা দাবী করে। এই টাকা না দিলে জমিতে যেতে দিবে না বলে নানা ধরনের হয়রানি করছে। আমি কিনে নিয়ে পুকুর করে মাছ চাষ করেছি। এখন একটা ঘর তুলতে যাওয়ায় বাঁধা দেয়। তার স্ত্রী জয়নব বাঁশ-খুঁটি তুলে ফেলে দেয়। গত ২৩ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটায়। এরপর আমি থানায় অবহিত করি এবং একটা জিডি করি। তার স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা করে আমাকে হয়রানি করছে। আমি ঢাকায় চাকুরী করি সকালে যাই সন্ধ্যায় বাড়ি আসি। আমি এ হয়রানি ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানাই।
ভুক্তভোগী লিটন বেপারী জানান, নাজমুলের বাবা আমিনুল হকের নিকট থেকে ১৪ শতাংশ জমি কিনেছি ২০১৭ সালে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে। এখন শুনতেছি আমিনুল হক তার ছোট স্ত্রী’র নামে আবার লিখে দিয়েছে। বর্তমানে তারা জমি ক্রেতাদের নানাভাবে ভোগান্তিতে ফেলছে। আমিও দুশ্চিন্তায় আছি, কোন ধরনের হয়রানির শিকার হই।
এছাড়া আরেক ভুক্তভোগী মহসিন কাজী জানান, তার চাচা আমিনুল হক শাজাহান কাজীর নিকট থেকে ৫ বছর আগে ৭ শতাংশ জমির জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেয়। সে জমি তাকে লিখে না দিয়ে তার ছেলেমেয়েকে লিখে দেয়। এখন ৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে বাকি আড়াই লাখ টাকা দেই দিচ্ছি করে ঘুরাচ্ছে। সে আরো জানায়, আমি তার ভাতিজা আমার সাথে এমন করছে। আর অন্য মানুষের সাথে তারা কি করতে পারে।
এ বিষয়ে কাজী আমিনুল হক শাজাহানের সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় নাই। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ছিল।
কাজী নাজমুল হক জানান, আপনারা যা শুনেছেন তা ঠিক না। ঘটনাটা হলো, আমার বাবা যে জমি বিক্রি করেছেন সে চৌহদ্দি মোতাবেক তারা দখলে যায়নাই। তাদের সুবিধামতো জায়গা সন্ত্রাসীবাহিনী নিয়া দখলে নিছে। দলিলে যে চৌহদ্দি দেওয়া আছে সেখানে সে ঘর উঠাক যা করুক আমার কোন সমস্যা নাই। তিনি আরো বলেন, সুজনরা তিনজন রাতে আমার বাড়ি এসে আমার বোনের গায়ে হাত দিয়েছে। সালিশি হয়েছিল, সমাধান না হওয়ায় মামলা করেছি।
সুজন লস্করের আইনজীবী আল আহাদ খান জিকু জানান, আসলে জমি সংক্রান্ত বিরোধ। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে ২টি মিথ্যা মামলা ও একাধিক অভিযোগ করেছে। যার উদ্দেশ্য ক্রেতাদের প্রতারিত করা। আসামীগণের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করেছে নাজমুল গংরা তা মিথ্যা। মামলাগুলো মিথ্যা তা আমি প্রমাণিত করতে সক্ষম হব।
সিরাজদিখান থানা উপ-পরিদর্শক (তদন্ত কর্মকর্তা) ইমরান খানের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারী নির্যাতন মামলাটির তদন্ত করেছি। সেটার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে উভয়ের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ আছে। বিস্তারিত ওসি স্যারের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।