নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ৮ বছরের এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দুই যুবক চন্দনধূল গ্রামের সেলিম সারেংয়ের ছেলে সালমান (১৯) এবং অপরজন একই গ্রামের রাসু সারেংয়ের ছেলে ইমন (১৮)। গত ৩ জুলাই শনিবার বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে উপজেলার চন্দনধূল গ্রামে ধর্ষণের এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার তিনদিন পর দেন দরবার শেষে গত সোমবার স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের মধ্যস্থতায় ঘরোয়া সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ওই দুই যুবক এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জুলাই শনিবার বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে বখাটে সালমান ও ইমন পার্শ্ববর্তী বাড়ির ওই কন্যাশিশুকে খেলার কথা বলে ফুসলিয়ে বাড়ীর পাশে সালমানদের পরিত্যাক্ত ঘরে নিয়ে যায়। পরে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর এক মহিলা দেখে ফেলায় স্থানীয়ভাবে ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হয়। ইছাপুরা ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জাফরুল হাসান স্বপন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজনকে সাথে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘরোয়াভাবে সালিশ মীমাংসা করেন। পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে ধর্ষণের মত বড় অপরাধ ঘরোয়া সালিশে মীমাংসা করায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের জেরার মুখে ভিকটিমের মামা সজিব বলেন, যা হয়েছে হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কিছু বলতে চাইনা। স্বপন মেম্বার একজনের বিচার করে দিয়েছে। আরেকজনের বিচার পরে করে দিবে। ভিকটিমের মা মজিদা আক্তার আপনাদেরকে খবর দিয়েছে। মেম্বার যেভাবে বিচার করেছে আমরা বিচার পেয়েছি। আমার মেয়ে এখন সুস্থ আছে। আমরা আপনাদের ডাকছি? তাহলে আপনারা আমার বাড়ীতে কেন আসছেন? নাম প্রকাশ না করার শর্তে চন্দনধূল গ্রামের এক বয়স্ক নারী জানান, আমি ওই ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সালমানকে ঘর থেকে বের হতে দেখে প্রথমে চোর মনে করি। পরে দেখি ছোট মেয়েটাও তার সাথে। এরপর আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করি কিন্তু মেয়েটা আমাকে কিছুই বলেনাই। পরে মায়ের কাছে মেয়েকে দিয়ে আসি। আমি ওইখানে শুধু একটা ছেলেকে দেখেছি। আরেক ছেলেকে দেখিনাই। পরে শুনি যে দুই ছেলে নাকি মেয়েটার সাথে খারাপ কাজ করেছে। স্থানীয়রা জানায়, স্বপন মেম্বার এলাকার কাউকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে ধর্ষণের মত ঘটনার বিচার করেছে। একজন মেম্বার কিভাবে ধর্ষণের বিচার করে ? আজকে যদি ওই মেয়েটা মারা যেতো তাহলে কেমন হতো ? ছেলে দুইটার ফ্যামিলি বড়লোক। তাই মেয়ের পরিবারকে হুমকি ধমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে তারা। এ কারণে মেয়ের মা মুখ খুলতে চায় না। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান সাহেবকে জানানো হয়েছে। সবার আগে স্বপন মেম্বারের বিচার হওয়া দরকার। ইছাপুরা ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জাফরুল হাসান স্বপন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথমে বলেন, তাদের মধ্যে পারিবারিক ঝগড়াঝাটি ছিলো। আমি বিচার করেছি। কিন্তু ধর্ষণের বিচার করিনাই। এসময় সাংবাদিকরা ধর্ষণের বিচারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেন। ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন হাওলাদার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। একজন মেম্বার কি করে এ ধরনের বিচার করে ? আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সে যদি এরকম কাজ করে থাকে তাহলে অন্যায় করেছে। সিরাজদিখান থানার ওসি মোঃ বোরহান উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এরকম কোন অভিযোগ পাইনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম জানান, আইন অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে কেউ ধর্ষণের মীমাংসা করতে পারে না।