একপক্ষের দাবি স্বাক্ষর জালিয়াতি এবং অপরপক্ষের দাবি এটি নিজের সম্পদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মনোফিলামেন্টের (জাল তৈরি) একটি আয়রন মেশিনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসারে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একপক্ষের দাবি স্বাক্ষর জালিয়াতি এবং অপরপক্ষের দাবি এটি নিজের সম্পদ। এই বিরোধ এখন থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। দুইপক্ষকে থানায় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। একপক্ষের পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গং থানায় গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের স্বপক্ষে কাগজপত্র থানায় জমা দিলেও অপরপক্ষ মরহুম জিন্নত আলী মেম্বার গংয়ের কোন কাগজপত্র গত শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত থানায় জমা দেননি বলে জানিয়েছেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনিচুর রহমান। মুন্সীগঞ্জ শহর লাগোয়া পঞ্চসার ইউনিয়নের মালিরপাথর এলাকার মরহুম হাজী জিন্নত আলী মেম্বারের ছেলে রবিউল আউয়াল সোহেল থানায় অভিযোগ করে বলেন, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের মালিকানাধীন ইকো ক্যালেন্ডার নামের কারখানা দখলের চেষ্টা চালায় এবং আয়রনের কিছু সরঞ্জাম নিয়ে যায়। এ ঘটনা সোহেল রাতে পুলিশকে অবগত করলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয় পুলিশের মধ্যেও। ব্যবসায়ী রবিউল আউয়াল সোহেলের দাবি, তার পিতা মৃত হাজ্বী মো. জিন্নত আলী মেম্বার ২৮ বৎসর আগে একটি ইকো ক্যালেন্ডার মেশিন মুক্তারপুর এলাকার ব্যবসায়ী ছাবের হাজ্বীর কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর ২৫ বৎসর তিনি নিজেই ব্যবসা করেন। ২০১৮ সালে তিনি মেশিনসহ পুরো ফ্যাক্টরিটি স্থানীয় হাজ্বী মোকলেসের কাছে ২ বৎসরের জন্য ৩০ লাখ টাকা চুক্তিতে ভাড়া দেন। চলতি বছরের ১২ জুন ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর মৃত হাজী জিন্নত আলী মেম্বারের সম্পত্তির ওয়ারিশ রবিউল আউয়াল সোহেল তার নামের ইস্ত্রি মিল (আয়রন) মিল বুঝে নেয়ার জন্য হাজী মোকলেসের কাছে যায়। পরের দিন ফ্যাক্টরিটি বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে আর বুঝিয়ে না দিলে পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী গোলাম মোস্তফার শরণাপন্ন হন। এরপর ৪ জুলাই প্রয়াত হাজী ছাবের আলীর জামাই পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার ব্যক্তিগত কর্মচারী মুসা ও মাসুদ কারখানায় গিয়ে নৈশ প্রহরীসহ কারখানার স্টাফদের বের করে দিয়ে কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন। এরপর পঞ্চসারের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার ইমরান ফ্যাক্টরির দায়িত্ব নেয় এবং গত ২২ জুলাই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার লোকজন কারখানা দখলের চেষ্টা এবং আয়রন মেশিনের যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন। প্রয়াত হাজী ছাবের আলীর মেয়ে এবং পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী উম্মে সালমা ডালিয়া জানান, ২০০০ সালে তার বাবার সাথে জিন্নত আলী মেম্বারের একটি চুক্তি হয় ৫ বছরের জন্য। এরপর তাদের ব্যবসা চলতে থাকে। এরপর ২০০৭ সালের ৮ মে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাবার মৃত্যুর ৯ দিন আগে ২০০৭ সালের ২৯ এপ্রিল জিন্নত আলী মেম্বার গং অংশীদারী ব্যবসার পৃথক একটি হাতের লেখা ভুয়া দলিল বানিয়ে তার ছেলে আয়রন মেশিনটির মালিকানা দাবি করে আসছে। বর্তমানে এই আয়রন মেশিনটির মূল্য ৫০ লাখ টাকা। এরপর তাদের সাথে বিরোধ দেখা দেয়। এদিকে, এই অংশীদারী ব্যবসা পৃথক হওয়ার দলিলের সাক্ষী মালিরপাথর এলাকার মৃত আজিজুল হকের ছেলে মো. মুকুল হোসেন গত বৃহস্পতিবার রাতে থানায় উপস্থিত হয়ে জানান, তিনি তখন হাজী জিন্নত আলীর মেম্বারের ওখানে কাজ করতেন। তাকে জোর করে হাজী ছাবের আলী বানিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। এই দলিলের সাক্ষী এবং হাজী ছাবের আলীর নামের স্বাক্ষরও তাকে দিয়ে করানো হয়েছে। আবার দলিলে দুই পক্ষের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও হাজী জিন্নত আলীর স্বাক্ষর নেই। ভুয়া দলিল বানিয়ে হাজী জিন্নত আলীর ছেলে রবিউল আউয়াল সোহেল গং এই মেশিনটি নিজেদের দাবি করছেন বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনিচুর রহমান জানান, পঞ্চসার ইউনিয়নটি শহরের সাথে। যদি কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সকালের ঘটনা রাতে পুলিশকে জানানোটা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। হাজী জিন্নত আলীর ছেলে কাগজপত্র দেয়নি, দিলে বুঝা যাবে এই সম্পদের প্রকৃত মালিক কারা। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ আবু হানিফ জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান গংয়ের দেয়া কাগজের সাথে যদি জিন্নত আলী গংয়ের কাগজের মিল থাকে তবে নিশ্চিত অংশিদারী ব্যবসা পৃথকের দলিলটি ভুয়া এবং জালিয়াতির মাধ্যমে বানানো হয়েছে। অংশীদারী চুক্তিপত্রের সাথে হাজী ছাবের আলীর স্বাক্ষরের কোন মিল নেই এবং যে কোন দলিলে দুইপক্ষের স্বাক্ষর থাকে। কিন্তু অংশীদারী ব্যবসা পৃথকের দলিলের একপক্ষের স্বাক্ষর ও স্বাক্ষর জাল করারও অভিযোগ আছে।
আয়রন মেশিনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসারে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা
আগের পোস্ট