নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের খিদিরপাড়া ইউনিয়নে একটি বাড়ির রাস্তা তৈরির জন্য প্রতিবেশি কয়েকটি পরিবারের পুকুর ও জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ওই পরিবারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৫ শতাংশ জমি দখল করে রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে। রাস্তা তৈরিতে বাধা দেওয়ায় উল্টো মামলা দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্যকে পুলিশ দিয়ে আটক করিয়েছে প্রভাবশালী পরিবারটি। এক্ষেত্রে উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নূর হোসেন বেপারী দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ এর প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে আমাদের জায়গা জোর করে ইউপি চেয়ারম্যান এক প্রভাবশালীর জন্য রাস্তা বানালো। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করাতে আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। এমনকি আমাদের পক্ষ নেওয়ায় মামলা দিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে প্রতিবেশি অটোরিকশা চালক মিজানুর রহমান বেপারীকে আটক করা হয়েছে। মিজানুর গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বড় নওপাড়া গ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিলে যায়। পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাসেল মিয়া মিজানুরকে ফোন করে থানায় দেখা করতে বলে। মাহফিল থেকে মিজানুর তার সঙ্গে থাকা পাঁচ বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে থানায় গেলে তাকে আটক করা হয়। আর শিশুটিকে এক প্রতিবেশির সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ওই রাতেই লৌহজং থানার পুলিশ মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পুকুরপাড়া গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে হানা দেয়। শ্বশুরবাড়িতে অনেকগুলো ঘর থাকায় নূর হোসেনকে ধরতে পারেনি পুলিশ। গ্রামের মানুষজন ওই রাস্তার বিপক্ষে ছিল। গত সোমবার রাস্তার কিছু মাটি পুকুরে সরে যায়। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ, ওই প্রভাবশালী যোগসাজশ করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রদর্শন করার অভিযোগ করে।
আরেক ভুক্তভোগী আবু সাঈদ বলেন, আমাদের জায়গা গেল, আমাদের গ্রামছাড়া করা হলো, এখন আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমরা কোথায় গেলে, কার কাছে গেলে সঠিক বিচার পাব?
গত মঙ্গলবার বংখিরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে মাটি ফেলে তৈরি কাঁচা রাস্তাটি পাকা করা হয়েছে। রাস্তার একপাশে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সংবলিত সাইনবোর্ড হেলে পড়েছে। সাংবাদিক পরিচয় জেনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসেন। তাদের অধিকাংশই ছিল নারী। তারা নিরীহ অটোরিকশাচালক মিজানুরকে আটক করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
৭৪ বছর বয়সী মো. আবু তালেব বলেন, আমাদের জায়গা দখল করে, আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাস্তা বানালো, আবার উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিল।
এ বিষয়ে প্রভাবশালী সুইজারল্যান্ড প্রবাসী আলমগীর হোসেন বলেন, যেখানে রাস্তা করা হয়েছে ওই জায়গা তাদের। মানুষজন নিয়ে আবু সাঈদরা নির্মাণ করা রাস্তা ভেঙে দিয়েছে। তাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আদালত রাস্তার কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে, ইউএনও, এসিল্যান্ডও একই কথা বলল, আপনারা সবার নির্দেশ কিভাবে অমান্য করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের কোনো নির্দেশ নেই। আবু সাঈদরা ভুয়া সাইনবোর্ড টানিয়েছিল। ইউএনও এসিল্যান্ড কেন কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন, এটা তারাই ভালো জানেন।
খিদিরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে ফোন করা হলে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, যা বলার সামনাসামনি এসে বলেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জয়েন আলী বলেন, খিদিরপাড়া ইউনিয়নের বংখিরা গ্রামে কাবিখা কিংবা টিআর প্রকল্পের তালিকায় কাজের কোনো বরাদ্দ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল তায়েবীর বলেন, গত সোমবার এক ব্যক্তি আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। আমরা সেই প্রেক্ষিতে মামলা নিয়েছি। মামলা নেওয়ার পরে আমরা তদন্ত করে দেখছি। আদালতের নির্দেশনা সাইনবোর্ড এবং জায়গার মালিকানা কাদের- এই নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জায়গার কাগজপত্র দেখিনি। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নিয়েছি। কাগজপত্র আছে কিনা পরে দেখবো।
এসিল্যান্ড ইলিয়াস শিকদার জানান, আমি দুইবার ঘটনাস্থলে গিয়ে অন্যের জায়গা জোর করে রাস্তা নির্মাণের জন্য নিষেধ করি এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে আসি।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল জানান, একটি পক্ষ আমাদের আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মৌখিকভাবে জানায়। আদালতের বিষয় নিয়ে মিথ্যে বলার কথা নয়। সেটিকে সত্য ধরে আমরা রাস্তার কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করবো। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খিদিরপাড়ায় রাস্তা তৈরির জন্য প্রতিবেশির জমি দখলের অভিযোগ
আগের পোস্ট