নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের খিদিরপাড়া বাসুদিয়ার হাজারো মানুষের ভরসা ইঞ্জিনচালিত নৌকা। পশ্চিম থেকে পূর্বে পারাপার বালিগাঁও খাল। এলাকাবাসির দাবী বেইলি ব্রিজ।
‘সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু একটি ব্রিজ কেউ করে দিল না। দেশের এত উন্নয়ন, তবু আমাদের এলাকার উন্নতির জন্য একটি ব্রিজের দাবি পূরণ হলো না’ -এভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন এলাকার মানুষ। খালের ওপারে বালিগাঁও বাজার, কলেজ, হাই স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র। খালের দুই পাড়ের মানুষের একমাত্র ভরসা নৌকা। লৌহজংয় উপজেলার খিদিরপাড়া বাসুদিয়া বালিগাঁও খাল পারাপারে কোনো সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাধ্যমে নদী পার হতে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বাসুদিয়া খালের এপার থেকে ওপারে বালিগাঁও বাজার, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্কুল ও কলেজ।
জানা যায়, নদীর পূর্বে পাড়ে একাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ হাটবাজার রয়েছে। তাই নদীর পূর্বপাড়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হলো খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হওয়া। খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। অন্যদিকে ক্ষেতেরপাড়া বেইলি ব্রিজ অবস্থিত সেতু ঘুরে যাতায়াতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। তাই ঝুঁকি নিয়ে খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ পরিস্থিতিতে এখানে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। আগে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ তা পূরণ করেননি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর এপার থেকে অন্তত ২৫ জন যাত্রী ওপারে যাওয়ার জন্য খেয়ায় উঠেছেন। এর মধ্যে শিশুসহ ১০ জন ছাত্রীও রয়েছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত নদী পার হয়ে আসছেন এ গ্রামের লোকজন।
বালিগাঁও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মিলি বলেন, এখানে খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হতে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। খেয়ার নৌকায় উঠতে গিয়ে অনেক সময় পড়ে গিয়ে আহত হই এবং সময়মতো খেয়া না পেলে নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারি না।
ছাত্রী মিলির কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার, মো. শাহ আলম, নাছিমা বেগমসহ একাধিক এলাকাবাসী বলেন, সেতুর অভাবে এ বাসুদিয়ার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। নদীর এপারে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং অন্য পারে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয় অবস্থিত। তাই দুই পাড়ের বাসিন্দাদেরই সমস্যা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম মল্লিক, শাহ আলম বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয় ওপারে হওয়ায় আমাদের প্রতিদিনই সেখানে যেতে হয়। ক্ষেতেরপাড়া বাসস্ট্যান্ড অবস্থিত সেতু ঘুরে যাতায়াতে অনেক সময় লাগে। এজন্য আমরা খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হয়ে থাকি। নদীতে ভাটার সময় খেয়ার নৌকা কিনারায় না আসাসহ ঝড়বৃষ্টির সময় নৌকায় উঠতে ও নামতে অনেক সমস্যা হয়।
খিদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. মামুন সরদার বলেন, এখানে একটি ব্রিজ খুবই দরকার। আগে অনেক বড় রাজনৈতিক নেতাই বলেছিলো করে দেবে। এখন আর সেই কথা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই।
খিদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, লিখে কোন লাভ হবে না। অনেক আগে আমি এমপিকে চিঠি দিয়েছি। কথা বলেছি কোন কাজ হয়নি। চেষ্টা করে লাভ নেই। আমার পক্ষ থেকে ডিউ লেটার দেয়া আছে। এটা বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা প্রকৌশলী মো. শোয়েব বিন আজাদ বলেন, লৌহজংয়ের খিদিরপাড়া ইউনিয়ন এলাকাটি আমি পরিদর্শন করে একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে দেব। বরাদ্দ পেলে ব্রিজ হবে।