সোনিয়া পারভীন : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্যে হুমকির মুখে জনজীবন। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। গজারিয়া উপজেলায় দেশের নামি-দামী মিল-কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে শিল্পাঞ্চলখ্যাত গজারিয়ার বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় বর্জ্য শোধনাগারের জন্য নেই কোনো ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি)। ফলে এসব কারখানার সমস্ত বর্জ্য আশপাশের নদী-নালা, খাল-বিলে গিয়ে মেশার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। এজন্য একদিকে যেমন বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর মাছ মরে যাচ্ছে অন্যদিকে দূষিত পানির গন্ধে পরিবেশ চরম হুমকির মুখে আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা ছাড়া বেশির ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানেই নেই ইটিপি ব্যবস্থাপনা। ওইসব কারখানার বর্জ্য নালা কেটে ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় কালভার্ট দিয়ে আশপাশের ডোবা-পুকুর ও নদী-নালায় ফেলা হচ্ছে। এতে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আর মাছ মরে যাচ্ছে। এমনকি নালা কাটায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মশাবাহিত রোগের উপদ্রব বাড়ছে। এ ছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় কারখানার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে রয়েছে।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আতাউর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইতিমধ্যে গজারিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছিল। জনবল সংকটের কারনে নিয়মিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না। গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান সাদী বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে এবং এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যে সকল প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য শোধানাগারের ব্যবস্থা নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরও সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করতে হবে।
এদিকে গজারিয়া উপজেলার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ আন্দোলন, মানববন্ধনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলায় যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে অধিকাংশই বিল্ডিং কোড মানছে না এবং বিল্ডিং তৈরির অনুমোদনের কোন তোয়াক্কা করে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গজারিয়া উপজেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপরদিকে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম নির্বাচনের আগে গজারিয়াকে বাসযোগ্য মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। অভিজ্ঞমন্ডলের মতে, অনতিবিলম্বে গজারিয়া উপজেলাবাসীর স্বার্থে প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গজারিয়ার চারপাশের নদীগুলো দখল দূষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে যেমন গ্রামগঞ্জের সব মানুষের কাছে উন্নয়ন সুবিধা পৌছে দিতে হবে তেমনি নদী মাতৃক গজারিয়ার নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশের শিল্পপতিরা অধিক লাভের আশায় তরল শিল্পবর্জ্য শোধন না করেই সরাসরি নদীতে নিক্ষেপ করছেন। এতে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। বিনষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য; জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ। গজারিয়ার চারপাশের নদী দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে শিল্প দূষণ। পলিথিনের অপব্যবহার, পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালী বর্জ্যও এসব নদী দূষণের জন্য কম দায়ী নয়। তাই যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন তাদের অবশ্যই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।