পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গুলি, শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গ্যাসের দাবিতে দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ। কর্তৃপক্ষের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গুলি, শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপে দূর পাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তি।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের দড়ি বাউশিয়া গ্রামে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল ফারুক এর নেতৃত্বে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তিতাস গ্যাসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্রামবাসী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক একাধিকবার বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্ডার খায়রুল হাসান ও গজারিয়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাজিব খান এর নেতৃত্বে অধিক সংখ্যক পুলিশ মহাসড়কে অবস্থান নেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক ছেড়ে যেতে না চাইলে পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি ও একপর্যায়ে হামলা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি, অজস্র রাবার বুলেট ও শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় গ্রামবাসী মহল্লার মসজিদে মসজিদে পুলিশকে প্রতিহতের জন্য মাইকিং করলে আশেপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্য ও নারীসহ একাধিক গ্রামবাসীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এসময় মহাসড়কের উভয় পাশের চট্টগ্রাম প্রান্তের দাউদকান্দি ও ঢাকা প্রান্তে সোনারগাঁও পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘন্টা মহাসড়ক বন্ধ করে রাখায় ভোগান্তিতে পড়ে দূরপাল্লার যাত্রীরা।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সমগ্র গজারিয়া উপজেলায় তিতাসের বৈধ সংযোগের সংখ্যা ২ হাজার। তবে এই উপজেলাটিতে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। পাশাপাশি কয়েকটি রেস্টুরেন্ট এবং কারখানা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে পরিচালিত হওয়ায় প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার গ্যাস চুরির ঘটনা ঘটছে। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের দৌরাত্ম্য কমাতে কোন প্রকার ঘোষণা বা নোটিশ প্রদান ছাড়া গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ যতদিন চাইবে ততদিন এই এলাকার সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ফলে বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের তেতৈতলা, ভবেরচর, বাউশিয়া ও ইমামপুর ইউনিয়নের সকল এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় দুই হাজার বৈধ আবাসিক গ্রাহক। অন্যদিকে গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে এসব এলাকার অধিকাংশ কল-কারখানা।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্ডার খায়রুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেল ৫টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার বলেন, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনদূর্ভোগ লাঘবে আমরা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি, বিষয়টা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।