নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে চমকদার বিজ্ঞাপন, লোভনীয় অফার দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা সারা বাংলা চেইনশপ নামের সুপারশপ এখন উধাও। সিরাজদিখান উপজেলায় সারা বাংলা চেইনশপ নামে একটি সুপারশপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে অর্ধশতাধিক শেয়ার হোল্ডারের কাছে শেয়ার বিক্রি করে শেয়ার বিক্রির কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইকবাল হোসেন ওরফে ইকু ইকবাল ও তার দুই ভাই নূর হোসেন ও মোঃ মনির হোসেন নামে এই তিনজনের বিরুদ্ধে। ইকবাল হোসেন ইকু ও তার ভাইদের প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্ম্নসাৎ নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় মোহাম্মদ রোমান হাওলাদার নামে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন ইকু ওরফে ইকু ইকবালের বিরুদ্ধে। এছাড়া মামলা মিমাংসার কথা বলে তার বিরুদ্ধে দেওয়া পূর্বের স্ট্যাটাস মিথ্যা স্বীকার করে পুনরায় স্ট্যাটাস দিতে বাধ্য করে ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিককে আইনি জালে ফাঁসানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে মর্মে অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ইকবাল হোসেন ইকু প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে এলাকায় একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে ওই সংগঠনে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গকে জড়িয়ে তাদের অগোচরে অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতকৃত অর্থ হজম করার চেষ্টা চালাচ্ছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিরাজদিখান উপজেলার চর কমলাপুর গ্রামের মৃত খালেক মাওলানার ছোট ছেলে ইকবাল হোসেন ওরফে ইকু ইকবাল ও তার দুই ভাই মোঃ মনির হোসেন ও নূর হোসেনসহ আরো বেশ কয়েকজন মিলে ২০১৫ সালে সিরাজদিখান বাজারস্থ শিকদার জেড এইচ শপিং কমপ্লেক্সে ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়ে সারা বাংলা চেইনশপ নামে একটি সুপারশপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সুপারশপের ব্যবসায় লভ্যাংশের স্বপ্ন দেখিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষের কাছে শেয়ার প্রতি ১০ হাজার ৬শত টাকা থেকে শুরু করে লাখ পর্যন্ত বিক্রি করেন ইকবাল হোসেন ইকু ও তার ভাইয়েরা। লাভের আশায় লোভে পড়ে ব্যবসার শেয়ার কিনে এমনভাবে প্রতারিত হতে হবে কে জানতো! হঠাৎ করে ব্যবসা গুটিয়ে একে একে এলাকা ত্যাগ করেন অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন ওরফে ইকু ইকবাল ও তার দুই ভাইসহ সারা বাংলা চেইনশপের সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা বাংলা চেইনশপের মূল হোতা ইকবাল হোসেন ইকু এখানকার টাকা নিয়ে বর্তমানে ঢাকার গাজীপুরে একটি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করে সেখানেই বসবাস করছেন। তার অন্যান্য ভাইয়েরাও সারা বাংলা চেইনশপ কেলেঙ্কারির পর থেকে ঢাকাতেই বসবাস করেন। এদিকে অভিনব এ প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে শুধু মূলধন ফিরে পাওয়ার আশায় বছরের পর বছর ঘুরছেন তার কাছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০১৫ সালে ব্যবসার শেয়ার কিনে ২০২৪ পর্যন্ত ৯ বছরে শেয়ারের লাভের টাকা দূরের কথা মূলধন ফেরত পেতে কয়েক জোড়া জুতা ক্ষয় করেও অভিযুক্ত ইকু ও তার ভাইদের নাগাল পাননি শেয়ার হোল্ডাররা। অনেকে আবার শেয়ারের টাকা ফেরত চেয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে বোবা বনে বসে আছেন। ভুক্তভোগীদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে কেনা শেয়ারের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ভুক্তভোগী আবিরপাড়া গ্রামের মৃত ডাঃ আবুল খায়েরের ছেলে মিজানুর রহমান (অরুপ) অভিযোগ করে বলেন, ১০ হাজার ৬শত করে আমি নিজে ৫টা শেয়ার কিনেছিলাম। আমার হাত দিয়ে আমার বন্ধু-বান্ধবদেরকেও শেয়ার কিনে দিয়েছিলাম। এখন তারা শেয়ারের টাকা না পেয়ে আমাকেই দোষারোপ করছে। এমনকি এ নিয়ে অনেক বন্ধুবান্ধব সম্পর্কও ছিন্ন করেছে। ১০ হাজার ৬শত টাকা করে আমার হাত দিয়ে মোট ৩৫টার মত শেয়ার কেনা হয়েছিলো। কারো টাকাই কেউ পায়নাই। আমিও পাইনি। বহুবার টাকা ফেরত চাওয়াতে দিচ্ছি পর্যন্তই।
চোরমর্দ্দন গ্রামের বাসিন্দা বিপুল শেখ নামে আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৬শত টাকা দিয়ে আমি সারা বাংলা চেইনশপের ব্যবসার শেয়ার কিনি। কিন্তু শেয়ার কেনার পর সেই টাকা আজ পর্যন্ত পাইনি। ইকু ইকবাল ও তার ভাই মনিরের কাছে টাকার জন্য বহুবার গিয়েছি, কিন্তু তাদের দেখা পাইনি। কেউ ৫০ হাজার, কেউ ১ লাখ টাকা দিয়েও শেয়ার কিনেছে। আমার মত বহু মানুষ শেয়ার কিনেছিলো। সবার অবস্থাই আমার মত। কেউই টাকা পায় নাই। আমাদের এতোগুলো টাকা তারা মেরে দিলো, অথচ আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারলাম না। তারা ৫০ থেকে ১০০ জনের মত মানুষের কাছ থেকে শেয়ার বিক্রি করে টাকা নিয়েছে। এরপর উধাও। আমরা পুলিশের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছিলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এক সিনিয়র নেতা বলেন, ইকু ইকবাল যে সংগঠনের আড়ালে এসব করে সেটা সব নেতারাই জানেন। এ নিয়ে আমি বহুবার বলেছি। এমনকি স্ট্যাটাসও দিয়েছি। কোন কাজ হয় না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন ইকু তার নামে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সারা বাংলা চেইনশপ আমার না। আমার ভাইদের ছিলো। আমি আর কিছুই জানি না।
অপর দুই অভিযুক্ত নূর হোসেন ও মোঃ মনির হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।