নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া ইউনিয়নের ১নং থেকে শুরু করে ৯নং পর্যন্ত রাস্তায় উপরে অবৈধ ড্রেজার পাইপ থাকায় চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন কার্যকরী ভূমিকা। তাই জনমনে প্রশ্ন, এগুলো দেখার কি কেউ নেই?
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম গাঁওদিয়া থেকে রাস্তার উপরের পাইপগুলো নতুন। বালি ভরার পাইপ যেন জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ইউনিয়নের এখানেই নয়; কোথাও বাকি নেই যেখানে পাইপের দ্বারা ভোগান্তিতে নেই সাধারণ জনগণ। সারি সারি করে ৭/৮টি পাইপ থাকায় চলাচলে তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। সেই সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় মাটি দিয়ে ৩/৪ ফুট উঁচু করায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ছোট ছোট ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাঁচ-ছয়জন যাত্রী নিয়ে পার হতে হিমশিম খায়। শুধু তাই নয়, এখন বৃষ্টির মৌসুম, পাইপের উপরে দেওয়া মাটি সরে গিয়ে পাইপ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এতে ছোট ছোট গাড়ি প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিক্সাচালকসহ ছোট ছোট পরিবহনগুলো।
গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পার হলেই বৌলতলী, বেজগাঁও ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে বসানো হয়েছে প্রায় ১৫টি বালির ড্রেজারের পাইপ। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তবে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়, রাস্তার ওপর দিয়ে শুধু পাইপ বসিয়েছে তা নয়; রাস্তার নিচের মাটি সরিয়েও বসানো হচ্ছে সারি সারি ড্রেজারের পাইপ। রাস্তায় অতিরিক্ত মাল বোঝাই কোনো ট্রাক চলাচল করলে যেকোনো সময় রাস্তা ভেঙে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা স্থানীয়দের। শুধু তাই নয়, এসব পাইপ বসাতে অনেক কৃষকের জমির উপরে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে নেওয়া হচ্ছে পাইপ। কেউ ভূমিদস্যুদের ভয়ে মুখ খুলে কিছু বলে না। স্কুলের প্রধান গেটের সামনে বসানো হয়েছে তিনটি মোটা পাইপ। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ও বয়স্কদের ভোগান্তির কারণ এই ড্রেজারের বালির পাইপ। পাইপ পার হওয়ার জন্য নেই কোনো ভালো ব্যবস্থা। বয়স্ক লোকজনের প্রায়ই পাইপ পার হতে কষ্ট হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, স্থানীয় যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কেউই মুখ খুলতে রাজি নন।
এ ব্যাপারে ড্রেজার পাইপ মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসব পাইপ বসিয়েছে। তবে পাইপের উপর মাটি দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করে দিবে বলে আশ্বাস দেন। গাঁওদিয়া পশ্চিম পাশে ড্রেজার পাইপের সাথে জড়িত মো. শহিদ (সবাই তাকে ড্রেজার শহিদ নামে ডাকে), মো. ইউসুফ মাদবর, মো. নশেদ মাদবর ও আয়নাল শেখ।
গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম ফকির বলেন, আমি চাই আমার এলাকার ড্রেজার পাইপগুলোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। আপনারা সাংবাদিক যারা আছেন বেশি বেশি লিখবেন।
লৌহজং উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. ইলিয়াস শিকদার বলেন, রাস্তার উপর দিয়ে অপরিকল্পিত অবৈধভাবে ড্রেজার বসানোর কোন সুযোগ নেই। রাস্তার উপরে পাইপ বসিয়ে কেউ যেন যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। এরপরও যদি করে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই এই ড্রেজারের পাইপ অপসারণের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।