নিজস্ব প্রতিবেদক
টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া এলাকায় সৌদি প্রবাসী সবুজ বেপারির স্ত্রী রিয়া মণি মারা গেছেন। রিয়া মণি এক সন্তানের জননী ছিলেন। তাদের দুই বছর বয়সের সামির নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে। রিয়া মণির মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? গত বুধবার রিয়া মণি রাত ৮টার দিকে মারা যান বলে শোনা যাচ্ছে। তবে টঙ্গীবাড়ীর পুলিশ রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে রিয়া মণির লাশ উদ্ধার করে। সেই সময় সেখান থেকে দুটি কাঠের ডাসা পুলিশ জব্দ করেন বলে রিয়া মণির বাপের বাড়ির সূত্র দাবি করছেন। রাতে হিমবাহিত এম্বুলেন্সে রিয়ামণির লাশ টঙ্গীবাড়ী থানায় রাখা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই এম্বুলেন্সে করে রিয়া মণির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ দুপুরের পর সাদুল্লাহ গ্রামে নিয়ে গেলে সেখানে শোকে বাতাস ভারি হয়ে উঠে। সেখানে জানাযা শেষে পঞ্চায়েত কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। রিয়া মণির বাপের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। জানা যায়, রিয়া মণিরা এক বোন দুইভাই। খুব আদরের বোন ছিলেন রিয়া মণি। তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে রিয়া মণির সাথে সবুজ বেপারির যৌতুক বিহীন বিয়ে হয় বলে জানা গেছে। তবে বিয়ের পরে নানা অজুহাতে দাবি দাওয়া আসতে থাকে রিয়া মণির বাবার কাছে। সেই দাবি দাওয়া পূরণের চেষ্টা করেন রিয়া মণির বাবা। ঘটনার ১৫ দিন আগেও একটি রঙ্গিন টেলিভিশন দিয়েছেন রিয়া মণির বাবা। এমন দাবি উঠেছে এ পরিবার থেকে। সবুজ সৌদি আরবে থাকলেও তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন দাবি দাওয়া করতেন রিয়া মণির বাবার কাছে। সবুজ বাবা মায়ের এক পুত্র সন্তান। তবে সবুজের আরো চার বোন রয়েছে। তারা সবাই বিবাহিত। তবে এ গ্রামে তাদের কয়েক বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সেই বোন ও বোনের জামাইদের এ বাড়িতে ব্যাপক প্রভাব ছিল। যাকে বলা হয়ে থাকে হর্তাকর্তা। তারাই এ বাড়িতে সবসময়ে মাদবরি করতেন বলে শোনা যাচ্ছে। সবুজের এক বোনের জামাই হচ্ছেন কমল শিকদার। তিনি থাকেন গাজীপুরে। তার স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনি বলেন, আমি খবর পেয়ে এখানে এসেছিলাম। পরে রাতেই আমি গাজীপুরে ফিরে যাই। এ হত্যাকান্ডে এখানে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। রিয়া মণির খালা বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যার পর তারা বাইরের লোক মারফত মোবাইলে খবর পান রিয়া মণির কি যেন হয়েছে। এ খবর পেয়ে স্বামীর সাথে সে আব্দুল্লাহপুর ছুটে যান। সেখানে রিয়া মণির শয়নকক্ষে তার দেহ একটি ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে এমনটি দেখতে পান। তিনি আরো বলেন, রিয়া মণি এদিন রোজা রেখেছিলেন। সেসময়ে তার হাতে খাবার লেগেছিল। মুখমন্ডল ভীষণ কালো দেখা গেছে। এ ধরণের সুরতহাল কোনভাবেই প্রমাণ করে না যে রিয়া মণি আত্মহত্যা করেছে। তাদের ধারণা তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ধারণা তাকে প্রথমে প্রহার করা হয়েছে। এরপর তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রহারের আলামত হিসেবে দুটি ডাসা জব্দ করেছেন। এরপর পুলিশ রিয়া মণির শয়নকক্ষ সীলগালা করে দিয়েছেন। এ ঘটনা প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদক রিয়া মণির শ্বশুরবাড়িতে যান। তার শাশুড়ি নানা অজুহাতে কিছুই বলতে চান না। সেখান থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরে এ বাড়িতে টঙ্গীবাড়ী থানার পুলিশ আসে। সবুজের মা ও বোনের জামাই ফারুককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, তিনি রাতে এ ঘটনাটি শুনেছেন। তার বাড়ির খুব কাছেই সবুজদের বাড়ি। খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান এবং আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
রিয়া মণির মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার তিনি টঙ্গীবাড়ীর পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি করেন। কোনভাবেই যেন আইনের ফাঁক গলিয়ে অপরাধীরা বের হয়ে না যায়।
টঙ্গীবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশিদ বলেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।