নিজস্ব প্রতিবেদক
তিল বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম তেলবীজ ফসল। বর্তমানে বাংলাদেশে যা তিল উৎপাদিত হয় তা চাহিদার থেকে এক তৃতীয়াংশ মাত্র। তবে এই চাহিদাকে সামনে রেখে চাষ উপযোগী জমি যেমন বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটিতে এর চাষাবাদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বেলে দো-আঁশ মাটিতে এর অধিক ফলন পাওয়া যায়। বর্ষাকালে মাটিতে পানি জমে থাকেনা এরকম সব ধরনের মাটিতেই চাষাবাদ করা যায়। বীজ বপনের সময় বলতে গেলে তিল বছরে দুই মৌসুমে চাষ করা যায়। মাঘ মাসের মাঝামাঝি হতে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত (মধ্য ফেব্রয়ারী হতে মার্চ মাস পযন্ত) ও ভাদ্র মাস (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর) তিল চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। এছাড়া বীজ বপন পদ্ধতিতে রয়েছে জমিতে রস বেশি হলে অল্প গভীরে বীজ বপন করলে পচেনা। জমি শুষ্ক হলে হালকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ ছিটিয়ে বা সারি করে বপন করা যেতে পারে। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিটার ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫-১০ সেন্টিমিটার দিতে হবে। বীজের হারের হিসেবে ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৭-৮ কেজি ও সারিতে বপনের জন্য ৬-৭ কেজি যথেষ্ট হবে।
আগাছা দমনের ক্ষেতে চারা অবস্থায় ২০ দিন পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি ধীর গতিতে হতে থাকে। এসময় আগাছা দ্রুত বেড়ে গাছকে ঢেকে ফেলতে পারে তাই অধিক ফলন পাওয়ার জন্য জমি থেকে আগাছা সরিয়ে ফেলতে হবে। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে সাধারনত তিল চাষাবাদে সেচের তেমন প্রয়োজন হয়না। মাটিতে রসের অভাব থাকলে হালকা সেচ দিয়ে বীজ গজানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় জমি শুষ্ক হলে একবার ও ভীষণ খরা হলে ৫৫-৬০ দিন পর আরেকবার সেচ দিতে হবে।
রোগবালাই দমনের ক্ষেত্রে বিছা, পোকা, হক, মত, কান্ড পচা রোগ তিল ফসলের ক্ষতি করে। কান্ড পচা রোগ দমনের জন্য বপনের পূর্বে ভিটাবেক্স /প্রভেক্স অথবা বেভিস্টিন -৫০ ডব্লিউ- পি দ্বারা প্রতিকেজি বীজে ৩.৫.২.৫ গ্রাম বীজ শোধন করে এ রোগের আক্রমণ কমানো যায়।
আর বিছাপোকা ডিম পাড়ার সাথে সাথে ডিমসহ পাতা ছিঁড়ে কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে বা মাটিতে পিষে মেরে ফেলা যেতে পারে। এতে করে বিছাপোকার আক্রমণ কমানো সম্ভব। ফসল কর্তন ও মাড়াই সংরক্ষণে সাধারনত তিল গাছের সবগুটি একসাথে পাকে না। নিচের দিক থেকে পাকা শুরু করে উপরের দিকে অগ্রসর হয়ে থাকে। উপরের গুটি পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে নিচের গুটি পেকে ফেটে মাটিতে পড়ে যাবে। তাই সব গুটি পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পাতা, কান্ড ও ফল হলুদ ভাব বা খরের বর্ণ ধারন করলে তিল কেটে ফেলতে হবে। ফসল কাটার পর বাড়ির উঠানে পলিথিন বিছিয়ে ৩-৪ দিন স্তুপ করে রাখার পর তিল গাছ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে লাঠির সাহায্যে পিটিয়ে মাড়াই করতে হবে। বীজগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে ৪-৫ দিন টানা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে যেন বীজের আর্দ্রতা ৯-১০% থাকে। টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় এ বছর ১৩২ হেক্টর জমিতে তিল চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাষাবাদের এলাকা হলো হাসাইল, কামারখাড়া, দিঘীরপাড় ও বালিগাঁও।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বালিগাঁওয়ে তিল চাষ
আগের পোস্ট