স্বাগত ২০২৪ ॥ বিদায় ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ ১ জানুয়ারি ২০২৪ সাল। একটি নতুন বছরের প্রথম দিন। স্বাগত ২০২৪। বিদায়ী বছর ২০২৩ সালকে জানাই বিদায় সম্ভাষণ। নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণের সোপান রচনা করার অনুপ্রেরণা। এই নতুন বছরের প্রারম্ভেই দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ এর সকল পাঠক, গ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছরে প্রতিটি মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হোক সেই প্রত্যাশাই আমাদের।
একটি ঘটনাবহুল বছরকে বিদায় দিয়ে সম্ভাবনা নিয়ে ফিরে এসেছে আরেকটি নতুন বছর। সেইসাথে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর পার করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০২৩ সাল ছিল আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সরকারের শেষ বছর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে পার হওয়া এ বছরের পুরো সময়জুড়ে ছিল বিরোধীদের আন্দোলন ও আসন্ন নির্বাচনের আলোচনা। এর মধ্যেই সরকার তার পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেছে এবং সফলতাও পেয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদায়ী বছরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে সরকারকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা বছরই ধারাবাহিক বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে থাকে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলো। তবে সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রেখে ভোট করার অবস্থানে অনড় থেকেই অগ্রসর হয় আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ বিরোধীদের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তৎপর থাকে। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত দেশে যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগও রাজপথে থাকবে বলে শুরু থেকেই ঘোষণা দেন দলটির নেতারা। সে অনুযায়ী ধারাবাহিক শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকে দলটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারও নেয় কঠোর অবস্থান। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির যে কোনো প্রচেষ্টা দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং হতাহতের ঘটনাও ঘটে যায়।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপিসহ বিরোধীরা আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। এ দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একজন পুলিশ সদস্য ও একজন রাজনৈতিক কর্মী প্রাণ হারান এবং সাংবাদিকসহ অনেকেই আহত হন। পরে আহত এক সাংবাদিকও মৃত্যুবরণ করেন। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ সমমনারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। হরতাল, অবরোধের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হতাহতের ঘটনাও আছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের তৎপরতা বজায় আছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দিক থেকেও কোনো কোনো দেশ একের পর এক বিভিন্ন তৎপরতা ও পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি নির্বাচন পরবর্তী আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে ওইসব দেশের পক্ষ থেকে। এর ব্যতিক্রম হলে ভিসানীতি কার্যকর এবং নিষেধাজ্ঞার কথাও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এসবের পাশাপাশি এ বছর সরকারের একটি বড় অর্জন ছিল রাশিয়া থেকে আমদানি করা পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়াম দেশে আনা। গত ৫ অক্টোবর দেশের প্রথম পারমাণবিক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বুঝে পায়। এদিন থেকে ইউরেনিয়ামের মালিকানা আসে বাংলাদেশের হাতে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে ইউরেনিয়াম ব্যবহারকারী ৩৩তম দেশ হয় বাংলাদেশ। ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। এছাড়া এ বছরই উদ্বোধন হয় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশে এটাই প্রথম নদীর পানির নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য তৈরি টানেল।
বছরজুড়ে আলোচনায় থাকা নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ বছরের শেষে আরও জোরালো হয়ে ওঠে। কোন দল নির্বাচনে আসবে, কোন দল আসবে না-এ আলোচনাই প্রাধান্য পেতে থাকে। শেষ মুহূর্তে বিএনপিসহ কিছু দল নির্বাচন বর্জন করলেও অধিকাংশ দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৭টি দলই অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন বর্জন করেছে ১৭টি দল। বিএনপিসহ বর্জনকারী দলগুলি নির্বাচন প্রতিহত করার কথাও বলেছে। এ নির্বাচন প্রতিহত করতে তারা আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারে এমন কথাও বলা হচ্ছে। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরও নাশকতার আশঙ্কা করছেন বলেও জানা গেছে।
নির্বাচনের মাঠেও ছড়িয়েছে সহিংসতার উত্তাপ। প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন অনেকে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশে বাধা তৈরি করতে পারে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ঠিক রাখতে বারবার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৮ ডিসেম্বর কয়েকটি জেলার নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন নিয়ে জাতীয়, আন্তর্জাতিকভাবে নানা রকম চক্রান্ত, সেই কারণে নির্বাচনের পরিবেশটা যেন সুন্দর হয়, উৎসবমুখর হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হয়। এখানে একটা অনুরোধ থাকবে, একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনারা বজায় রাখবেন।’
দেশে আন্দোলন পরিস্থিতি, যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা কিছু দেশের নানা পদক্ষেপের আলোচনার মধ্যেই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকার।