গত রোববার দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ একটি সুসংবাদ দিয়েছে। আর তা হলো মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে সচেতন এলাকাবাসী ৬টি মাদকের আস্তানা ভেঙে দিয়েছে। ধন্যবাদ এই মালখানগর গ্রামবাসীকে। তারা ঘুমন্ত মানুষকে সজাগ করে দিয়েছেন। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় ছাপা হওয়া শত শত দুঃসংবাদের মধ্যে যে এটি একটি সুসংবাদ সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সুস্বাগত এই সিরাজদিখানের মালখানগর গ্রামের সচেতন এলাকাবাসীকে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সবার চোখ খুলে দিয়েছে। মাদকের সর্বনাশা প্রতিরোধে এলাকাবাসীকেই যে সবার আগে সচেতন হতে হবে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিরাজদিখানের মালখানগরবাসী।
প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিরাজদিখানের মালখানগর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি এবং সেবন করে আসছিল মাদক বিক্রেতারা এবং মাদকসেবীরা। এতে এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে চলে নানা অসামাজিক কার্যক্রম। বিষয়টি দৃষ্টি এড়াতে পারেনি সচেতন এলাকাবাসীর।
গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সচেতন এলাকাবাসী মাদকবিরোধী অভিযানে নামেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মালখানগর গ্রাম্যসমাজ, মসজিদ কমিটি, যুবসমাজ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। কাজীরবাগ, রথবাড়ি, মালামত, নাইশিং, দেবিপুরা ও গোড়াপীপাড়া গ্রামের শতাধিক সচেতন মানুষ এই মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেন। এ ঘটনার পর সিরাজদিখানের মালখানগর এলাকায় যারা মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলে দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে এলাকাকে কলুষিত করে ফেলেছিল তাদের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কাজেই মাদকমুক্ত সমাজ তথা দেশ গড়তে প্রতিটি মানুষকেই এমনিভাবে সচেতন হলে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার সফলতা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মুখের পানে তাকিয়ে থেকে সমাজকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি না। তাই মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলার প্রতিটি গ্রামকে মাদকমুক্ত করতে এমনিভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভেঙে দিতে হবে মাদকের আস্তানা। যারা মাদক বেচাকেনা করে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিয়েছে তাদেরকে সৎ পথে কাজ করে জীবিকা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে। আর সেটা করতে পারেন সমাজের সচেতন মহল বলে আমরা মনে করি।
আমরা মনে করি, সিরাজদিখানের মালখানগরবাসী আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। তাদের এই সাহসী মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য তারা সবার ধন্যবাদ পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মানুষকে। তবেই মাদকমুক্ত হবে মুন্সীগঞ্জ। একইসঙ্গে মাদকবিরোধী যে আইন রয়েছে তার সুষ্ঠু প্রয়োগ জরুরী। মাদকাসক্তরা গ্রেফতার হওয়ার পর রহস্যজনকভাবে ছাড়া পেয়ে যায় এবং পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়। এভাবেই মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মাদকের আগ্রাসন গড়ে উঠেছে। সেই বিষয়টি নজরে নিতে হবে। এই মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমাজের প্রতিটি মানুষ সোচ্চার হলেই মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তখনই মাদকমুক্ত হবে বাংলাদেশ।
আসুন, সবাই মিলে মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। সমাজকে মাদকমুক্ত করি। আগামী প্রজন্মকে মাদকের আগ্রাসন থেকে বাঁচাই। আগামীদিনে সেটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চাই সামাজিক প্রতিরোধ
আগের পোস্ট