লাইফস্টাইল ডেস্ক
সুস্থ দেহের জন্য প্রয়োজন সুস্থ মন। মানসিক অসুস্থতার অন্যতম প্রধান একটি লক্ষণ মানসিক উদ্বেগ। পরিসংখ্যান অনুসারে গোটা বিশ্বে প্রায় ২৭ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। দুশ্চিন্তা, অবসাদ, বিভিন্ন রকমের ভয় কিংবা মেলামেশার সমস্যা মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ একাধিক। এ ধরনের সমস্যা বেশিদিন থাকলে, মনোবিদের পরামর্শ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে একাধিক স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস তেমনই একটি পদ্ধতি। জটিল কার্বস, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে মানসিক চাপ কমতে পারে। দেখে নিন কোন কোন খাবার মানসিক চাপের সমস্যা কমাতে কাজে আসতে পারে।
পালং শাক
মানসিক চাপ কমাতে পালংশাক অন্যতম। পালংশাক শরীরে ডোপামিন তৈরি করে। ডোপামিন আমাদের মেজাজ শান্ত রাখতে সাহায্য করে। পালং শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেশিয়াম। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, এই খনিজ উপাদানটি মানসিক উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি পালং শাক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত ‘ফ্যাভোনল’ জাতীয় উপাদান মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডার্ক চকোলেটে থাকে ‘এপিক্যাটেকিন’ ও ‘ক্যাটেকিন’ নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। বেশ কিছু গবেষণা বলছে, এই উপাদানগুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মস্তিষ্কের কোষে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। স্নায়ুকোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে জানা যায়। তবে ডায়াবিটিস ও অনুরূপ সমস্যা থাকলে ডার্ক চকলেট খাওয়ার আগে নিতে হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
হলুদ
হলুদে থাকে ‘কারকিউমিন’ নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি মানসিক উদ্বেগ কমাতে ও মস্তিষ্কের পুষ্টিতে সহায়তা করে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া কারকিউমিন বৃদ্ধি করে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড, যা ডিএইচএ-এর ক্ষরণ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এই ডিএইচএ মস্তিষ্কের কোষের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সমীক্ষা অনুসারে আট সপ্তাহ অল্প পরিমাণ হলুদ খেলে কমতে পারে মানসিক উদ্বেগ।
দুধ
দুধ ভিটামিন ‘ডি’র অন্যতম উৎস। গবেষণা থেকে জানা গেছে, দুধ ভিটামিন ‘ডি’র খোরাক জোগায়। কারণ ভিটামনি ডি একটি ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন। সুতরাং বলা যায়, মানসিক চাপ কমাতে যেসব খাবার উপকারী, তার মধ্যে দুধ অন্যতম।
গ্রিন টি
গ্রিন টি-তে থাকে ‘এল-থিয়েনিন’ নামক এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ও দুশ্চিন্তা কমাতে এটি অত্যন্ত উপযোগী। গবেষকদের মতে, গ্রিন টি-তে এক দিকে কমে ‘করটিসোল’ হরমোন, অন্য দিকে বাড়ে ‘ডোপামিন’ ও ‘সেরোটোনিন’ ক্ষরণ। করটিসোলকে বলা হয় ‘স্ট্রেস হরমোন’, অর্থাৎ এটি মানসিক চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোন মন ভাল রাখতে সহায়তা করে।
টার্কির মাংস
দেহের প্রোটিনের অন্যতম উৎস মুরগির মাংস। বিশেষ করে টার্কি মুরগির বুকের মাংস, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এ খাবারে দেহে অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। এছাড়া এ মুরগিতে উপস্থিত প্রোটিন সেরাটোনিন উৎপাদনেও সাহায্য করে। যা আমাদের ক্ষুধা বাড়ায়, মন প্রফুল্ল রাখে এবং অনুভূতি শক্তি বাড়ায়।
স্যামন মাছ
স্যামন মাছ খুবই পুষ্টিকর একটি মাছ। স্যামন মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। স্যামন মাছের এক তৃতীয়াংশ আউন্সে দুই হাজার মিলিগ্রামেরও বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।
দই
পরীক্ষার আগে দই খাওয়ার প্রচলন কেন, তা কখনও ভেবে দেখেছেন? আসলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোবায়োটিকে ভরপুর দই-এ প্রদাহ কমে। স্নায়ু সংবেদ স্বাভাবিক রাখতেও এর জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি প্রোবায়োটিকে বাড়ে সেরোটোনিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে দু’বার করে ১২৫ গ্রাম দই এক মাস খেলে অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়, ফলে কমে মানসিক উদ্বেগ।
বাদাম
কাঠবাদাম, আখরোট, চিনাবাদামে রয়েছে ভরপুর প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং সবচেয়ে উপকারী উপাদান ম্যাগনেশিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয় যেসব খাবার
আগের পোস্ট