নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের অবহেলিত মুক্তারপুর-বিনোদপুর সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। ভারী ও হালকাসহ সকল ধরণের যানবাহন এ সড়ক দিয়ে এখন চলাচল করছে। এর ফলে অনেকটাই ভোগান্তি কমেছে এ সড়কে চলাচলকারী লোকজনের। তবে বর্তমানে এ সড়কটি এখনো অনেকটাই নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। কোনরকমে যাতে যানবাহন চলাচল করতে পারে সেইভাবে এ সড়কটি প্রাথমিকভাবে উপযোগী করা হয়েছে। তবে এ সড়কে বর্তমানে পায়ে হেঁটে চলাচল এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এ সড়কে বর্তমানে ইটের টুকরা ও বালি মিশ্রিত করে কোনরকমে সড়কটি সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এভাবে কতক্ষণ চলবে তা বলা মুশকিল বলে অনেকেই মনে করছেন। বড় ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা লাগাতার কয়েকদিনের বৃষ্টি হলে এ সড়কটি আবারও ভাঙ্গনের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সড়কটি চালু হওয়ায় এ পথে চলাচলকারীরা অনেকটাই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এ সড়কের বর্তমান ঠিকাদার কোনরকমে এ সড়কটিতে জোড়াতালি দিয়ে সড়কটিকে সচল রাখার চেষ্টা করছেন। আর তাতেই এখানে বর্তমানে যানবাহন চলাচল করছে। তবে সড়কটি প্রকৃত অর্থে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য এখন কিছুটা উপযোগী। কোনভাবেই ভারি যানবাহন চলাচলে এ সড়কটি উপযোগী না। কিন্তু এখানে কয়েকটি হিমাগার ও অন্যান্য ভারি শিল্প কারখানা থাকায় এ সড়কটি দিয়ে এখন ভারি যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। ফলে এ সড়কটি ভারি যানবাহনের কারণে যেকোন সময়ে দেবে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এ পথে চলাচলকারীরা। সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ার আগে এখানে ঠিকাদার ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে গাইডওয়াল নির্মাণে হাত দেয়। কিন্তু বর্ষার পানি বেড়ে যাওয়ায় তা ডুবে যায়। তবে এখন নদী থেকে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় সেই গাইডওয়াল ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে নদীর ঢেউয়ের পানি বর্তমানে খেলা করছে। আরো পানি কমলে তবেই এখানে পরের অংশের গাইডওয়াল নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে ঠিকাদার মনে করছেন। তার আগে এখানে তেমনটা কাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে অনেকেই মনে করছেন। নদীর তীরে প্রাথমিকভাবে গাইড নির্মাণ হওয়ার পরেই এ সড়কের প্রধান কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন এখানকার লোকজন। গত কোরবানি ঈদের সময়ে ধলেশ্বরী নদীতে হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধি পায়। তখন এ রাস্তার প্রবেশমুখ মুক্তারপুর বাজারের পরের অংশে বিপুল এলাকা নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। তাতে তখন এ পথে চলাচলে হালকা যানবাহনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমের আগমুহূর্তে এ পথে রাস্তা পুনঃনির্মাণের লক্ষ্যে ঠিকাদার প্রাথমিকভাবেই কাজ শুরু করে। তবে ধলেশ্বরী নদীতে ধীরে ধীরে বর্ষার পানি বাড়তে থাকায় ঠিকাদার সেই সময়টাতে কাজ বন্ধ করে দেন। তবে এ রাস্তা নির্মাণের লক্ষ্যে অনেক আগেই মুন্সীগঞ্জের সদরের এলজিইডি ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়। কিন্তু ঠিকাদার এখানে বিলম্বে কাজ শুরু করেন। তারপরে ঠিকাদার এখানে কাজ শুরু করলেও সেই কাজে ধীর গতি লক্ষ্য করা যায়। আর একসময়ে ধলেশ্বরী নদীতে বর্ষার পানি বেড়ে যাওয়ায় এখানকার রাস্তাটিতে বিপত্তি দেখা দেয়। মুক্তারপুর বিনোদপুরে এ রাস্তাটি এ পথের জন্য অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হচ্ছে এ পথ দিয়ে খুব সহজেই মিরকাদিম পৌরসভার বাণিজ্যিক বন্দর কমলাঘাটে যাওয়া যায়। এ রাস্তার ট্রানজিট পয়েন্টে রয়েছে ইতিহাসের অংশ ফিরিঙ্গিবাজার ও বিনোদপুরের চাউলের আড়ৎ। জেলার সবগুলো চাউলের আড়ৎ হচ্ছে এ পথে। এখান থেকেই জেলায় চাউলের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এ পথে রয়েছে একাধিক রাইস মিল, বালু ও ইটের ব্যবসার আড়ৎ। জেলার অন্যতম মাছের আড়ৎ রয়েছে এ পথের শেষ সীমান্তে। এখান থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরে ও নারায়ণগঞ্জে পাইকারিতে মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। এ কারণে নব্বইয়ের দশকে এ পথে ধলেশ্বরী নদীর কুল ঘেঁষে এ রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। আর রাস্তাটি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে দীর্ঘ বছর পর এবারই প্রথম এ রাস্তা আবারো পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেয় মুন্সীগঞ্জ সদরের এলজিইডি।
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জ সদরের এলজিইডি এ রাস্তাটিতে ১৩০০ মিটার রাস্তা পুনঃনির্মাণের লক্ষ্যে এবার কাজ শুরু করছে। এখানে দুটি ভাগে কাজ হবে। তার মধ্যে রয়েছে আরসিসির একটি অংশ। আর পরের অংশে রয়েছে পিচের কার্পেটিং। এ কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ কাজের ঠিকাদার হচ্ছেন আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন। এখানে এ কাজটি শুরু হওয়ার কথা ছিল গত অর্থবছরের জানুয়ারি মাসের ২০২২ সালের ৯ তারিখে। কিন্তু এখানকার ঠিকাদার এখানে কাজ শুরু করেন এপ্রিলের শেষের দিকে। এ কারণে এ রাস্তাটি শুধুমাত্র ঠিকাদারের খামখেয়ালিতে নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। চলতি অর্থবছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে এ রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ঠিকাদারের শর্তাবলি অনুযায়ী। কিন্তু বিলম্বে কাজ শুরুর কারণে এখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ রাস্তা নির্মাণ কাজ ঠিকাদার শেষ করতে পারবে না বলে অনেকই মনে করছেন। এ পথের রাস্তাটিতে যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক হতে অনেকটাই সময় লাগবে। এ রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ার পথে। এ বিষয়ে একাধিকবার পত্রিকাগুলোতে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া এখানকার হিমাগার মালিকরা এলজিইডিকে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তা দ্রুত নির্মাণের লক্ষ্যে পত্র দেন। মুন্সীগঞ্জ সদরের এলজিইডি এ বিষয়ে একাধিকবার ঠিকাদারকে তাগিদপত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু ঠিকাদার এ রাস্তা নির্মাণে ধীরগতি অবলম্বন করেন। আর তাতে বৃহৎ ক্ষতির মুখে পড়েন এই পথের আমজনতা।
আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার জানান, এ পথে রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে প্রাথমিকভাবে সড়কটি সচল রাখার স্বার্থে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। এখন এ সড়কে সকল ধরণের যানবাহন চলাচল করছে। গাইডওয়াল থেকে পানি নেমে গেলেই তা নির্মাণে হাত দেয়া হবে। সেসময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।
মুন্সীগঞ্জ সদরের এলজিইডির প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম আহসান জানান, আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদারকে বারবার তাগিদপত্র দেয়া সত্ত্বেও তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এখানে কাজ শুরু করেননি। আর তাতেই এ সড়ক পথটি নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে। বর্ষার পানি নেমে গেলেই এখানে পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।