নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলার বেশিরভাগ কৃষকের আশানুরূপ ফলন হয়নি। আলুর কাক্সিক্ষত মূল্য না থাকায় পাইকারের দেখা মিলছে না। তাই কৃষকেরা লোকসানের ঝুঁকির আশঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু হয় সিরাজদিখান উপজেলায়, তারপর টঙ্গী বাড়ী, লৌহজং, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ সদর, গজারিয়া। এ বছর কৃষকের প্রতি কানি (১৪০ শতাংশ) জমিতে আলু চাষে খরচ পড়েছে মণ প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা করে। কিন্তু খরচের তুলনায় আলুর দাম পাচ্ছে না কৃষকেরা। আলুর ফলন করতে যে খরচ পড়েছে তার চেয়ে আলুর পাইকাররা দাম কম বলে। সারা বাংলাদেশের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের আলু খুবই সুস্বাদু। এ জেলার অর্ধেকেরও বেশি লোকজন আলুর উপর সারা বছর জীবিকা নির্ভর করে। গেল ২ বছর ধরে চাষীরা লোকসানের মধ্যে আছে। সিরাজদিখান উপজেলার যেসকল ইউনিয়নগুলোতে আলু চাষ হয় তার মধ্যে ইছাপুরা, জৈনসার, মধ্যপাড়া, কোলা, বয়রাগাদী, রামকৃষ্ণদী, বাসাইল এসব এলাকার জমি থেকে কিছুদিন ধরে আলু উত্তোলন শুরু করেছে। শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নের কল্লিগাঁও, পূর্ব দেউলভোগ, পশ্চিম আটপাড়া, পূর্ব আটপাড়া, বাড়ৈগাঁও হাসারগাঁও, তন্তর ইউনিয়নের পাড়াগাঁও, রুশদী, কাননীসার, ষোলঘর ইউনিয়নের খৈয়াগাঁও এলাকায় আলু উত্তোলনের সময় কৃষকরা অনাবৃষ্টির কবলে পড়েন। লৌহজং উপজেলার নওপাড়া, পয়সা, মাইজগাঁও, বালিগাঁও, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আড়িয়াল, সুবচনী, কলমা ডহরী, বেতকা, গজারিয়া উপজেলা ও মুন্সীগঞ্জ সদরে আলু উত্তোলন শেষ পর্যায়ে।
টঙ্গীবাড়ীর আলুচাষী রেজাউল করিম দিপু বলেন, আমাদের এলাকায় কিছু জায়গায় আবাদী জমিতে মাটি ভরাট করায় বর্ষা মৌসুম শেষে জমি থেকে পানি নিষ্কাশন হতে দেরী হওয়ায় আলু বপন করতে দেরী হয়। তাই আমরা আলুর ফলন কম পেয়ে থাকি।
কল্লিগাঁও গ্রামের আলুচাষী বাবুল (৬৫) বলেন, এ বছর আলুর ফলন অনেক কম হয়েছে। আবার এই ২/৩ দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে জমি থেকে ঠিকমত আলু উত্তোলন করে ঘরে নিতে পারছি না।
বাড়ৈগাঁও গ্রামের আলুচাষী আঃ জলিল (৫০) বলেন, ২ বছর যাবৎ আলু চাষ করে প্রায় ১ কোটি টাকার বেশি ঋণ হয়েছি। এ বছর ঋণ কাটিয়ে ওঠার জন্য আলু চাষ করে লোকসানের মধ্যে আছি।
সিরাজদিখান উপজেলার শিয়ালদী গ্রামের মোঃ রিপন চোকদার বলেন, ৩ বছর যাবৎ আলু চাষ করে লোকসানের মধ্যে এমনকি এখন বাড়িঘর বিক্রি করে মানুষের পাওনা টাকা দিতে হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৬৯টি হিমাগার রয়েছে। সিরাজদিখান উপজেলার হাছান হিমাগারের মালিক নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বস্তা প্রতি আলু রাখার ভাড়া রাখছি ২১০ টাকা করে। কয়েক দফায় বিদ্যুতের মৃল্যবৃদ্ধির কারণে ২০ টাকা ভাড়া বেশি গুনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই হিমাগারের ধারন ক্ষমতা ১ লক্ষ ৯০ হাজার বস্তা। এ পর্যন্ত ১ লক্ষ বস্তা কৃষকেরা হিমাগারে রেখেছে। আলুর ফলন কম হওয়াতে এই অবস্থা।
মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর দেওয়ান হিমাগারে ৫ লক্ষ বস্তার রাখার ধারন ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে এ বছর ৩ লক্ষ বস্তা জমা হয়েছে। হিমাগারের মালিকরা জানান, ১৯ মার্চ থেকে শুরু করে ২১ মার্চ পর্যন্ত এই অনাবৃষ্টির আগে যারা হিমাগারে আলু রেখেছে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
মুন্সীগঞ্জে আলু উত্তোলন শুরু; লোকসানের ঝুঁকির শঙ্কা বেশি
আগের পোস্ট