নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি গ্রামের গৃহবধূ শিমু আক্তারের (২৭) আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলায় আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার প্রায় একমাস অতিবাহিত হতে চললেও আসামী গৃহবধূর স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ এখনও রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে গেলো ১৭ জুন স্বামীর বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দেয় ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শিমু। তাদের সংসারে রয়েছে ৭ বছরের শিশু সন্তান নূর আলম উসমান গনি। ঘটনার পরদিন গৃহবধূর বাবা নুর ইসলাম বেপারী বাদী হয়ে সদর থানায় আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলা দায়ের করেন। এতে স্বামী কামরুল বেপারী (৩৫), শাশুড়ি তাসলিমা বেগম (৫০) ও ননদ শাহনাজ বেগমকে (৩২) আসামী করা হয়।
প্রায় ১০ বছর আগে সদর উপজেলার মুন্সীকান্দি গ্রামের শাহ আলী বেপারীর ছেলে কামরুল বেপারী ও একই উপজেলার আধারা ইউনিয়নের পশ্চিম রাঢ়ীপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম বেপারীর মেয়ে শিমু আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়িতে সুখ খুঁজে পায়নি গৃহবধূ শিমু আক্তার। সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে প্রায়শ: স্বামীর বাড়ির লোকজন তার সঙ্গে অযথা খারাপ আচরণ করে আসছিলো। এর মধ্যে সৌদি আরব প্রবাসে থাকাকালে স্বামী কামরুল বেপারী পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এ খবর জানার পর মোবাইল ফোনে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো প্রতিদিনই। এতে কথায় কথায় গৃহবধূ শিমুকে বাড়ি থেকে চলে যেতো বলতো স্বামীর স্বজনরা। শুধু তাই-ই নয়, তাকে আত্মহত্যা করতে পারিস না বলেও মন্তব্য করতো শাশুড়ি-ননদরা। তাতেও থেমে থাকেনি। গৃহবধূকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে চাপ দিতো। ঘটনার ৭ মাস আগে দেশের বাড়িতে ফিরেন স্বামী কামরুল বেপারী। গত ১৭ জুন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামীর বসতবাড়িতে সংসারের কাজ করছিলো শিমু। এসময় স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ গৃহবধূকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলে। এতে অস্বীকৃতি জানালে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে গৃহবধূকে বাবার বাড়িতে চলে যেতে বলে। পরে ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অভিমান করে শিমু আক্তার চৌচালা ঘরের একটি কক্ষের বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে গৃহবধূর বাবা তার মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মামলা হলে এখনও পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এতে করে শিমুর পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
শিমুর মা দুলালী বেগম (৪৫) আক্ষেপ করে বলেন, পুলিশ মূল আসামীকে গ্রেফতার করেনি এখনো। আমরা গরীব বলে, কেউ আমাদের পাত্তা দেয় না। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মো. সাচ্চু মিয়া বলেন, মামলার ২ ও ৩নং আসামি জামিনে রয়েছেন। তবে ১নং আসামি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।