নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জে দলিল লেখক সমিতির কলম বিরতিতে দূর্ভোগে পড়ছে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা দাতা গ্রহীতারা। গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন দলিল রেজিষ্ট্রির কাজটি সম্পাদন করতে না পেরে ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
কয়েকজন দলিল লিখকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল থেকে দলিল লেখক সমিতির সাথে সংশ্লিষ্টরা কলম বিরতি শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। দলিল লেখক সমিতির কলম বিরতির কারণে প্রতিদিন সরকারের ১ থেকে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ সদর সাবরেজিস্টার নুরে তোজাম্মেল হোসেন লেখকদের সাথে অপমানজনক কথাবার্তা বলার কারণে দলিল লেখকরা কলম বিরতি পালন করছেন, লিখছেন না কোন দলিল। আর এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন দলিল তল্লাশিকারকরাও। এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া দলিল তল্লাশিকারক সমিতির সভাপতি তৈয়বুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাভাবিকভাবে নিয়মমাফিক দলিল হবে। অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে দলিল করবে কেন মানুষ? সাব রেজিস্টারের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তিনি দলিল লিখকদের কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এ অবস্থায় দলিল লেখার কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় দলিল করতে আসা মানুষ প্রতিদিনই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সদর উপজেলায় এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে জমির দলিল করতে আসা শহরের দক্ষিণ ইসলামপুরের সালাউদ্দিন আহমেদ ও মিরকাদিম পৌরসভার জিরানন্দ পট্টি এলাকার মমতাজ বেগম। তারা বলেন, ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার দিন থেকে আজ অব্দি দলিল রেজিষ্ট্রশন করতে পারছেন না। তারা আরো বলেন, আমাদের মতো অনেকেই প্রতিদিনই দলিল করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী দক্ষিণ ইসলামপুরের সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, পারিবারিক প্রয়োজনে টাকার বিশেষ প্রয়োজন ছিল বিধায় জমি বিক্রি করতে এসেছেন কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তার মতো অনেকেই এ সমস্যায় পড়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান দিদার জানান, দলিল রেজিস্ট্রি করতে না পেরে দাতা গ্রহীতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সদর সাব-রেজিস্ট্রারের অনৈতিক দাবী পূরণ করা সম্ভব না বিধায় দলিল সম্পাদন করা যাচ্ছে না। অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার করে নিয়ে একজন ভালো সাব-রেজিষ্ট্রার নিয়োগ দিলেই দলিল লেখক সমিতির সবাই তাদের কলম বিরতি প্রত্যাহার করবেন। তিনি আরো বলেন, সদর সাব-রেজিস্ট্রার নুরে তোজাম্মেল হোসেন বলেছেন দলিল করতে আপনাদের (দলিল লেখক) অফিসের উপরে আসতে হবে না। পার্টির সাথে আমি নিজে কথা বলে দলিল রেজিস্ট্রি করে দিবো।
এ বিষয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রার নুরে তোজাম্মেল হোসেন বলেন, দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দের অনৈতিক দাবী পূরণ না করায় তারা গত ৭ দিন ধরে দলিল সম্পাদন না করে কলম বিরতি পালন করে আসছেন। এতে করে দূর্ভোগে পড়েছে দাতা গ্রহীতারা। তিনি আরো বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তির নামে ভূমির সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং অনুরূপ খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক না থাকলে বা প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে তিনি উক্ত ভূমি বিক্রয়, দান বা হেবা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যার্টনী সম্পাদন বা রেজিস্ট্রেশন করিতে পারবেন না। কিন্তু এসব বিধি-বিধান মানতে নারাজ দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ। তারা সরকারী সর্বশেষ গেজেটের বিধি-বিধান উপেক্ষা করে কলম বিরতির মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সদর উপজেলার দুটি পৌর এলাকার জমি রেজিস্ট্রির মূল্য ১০ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে হলে আয়কর রিটার্ন উপস্থাপন করতে হবে। উপস্থাপন ব্যতীত জমি নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে না। কিন্তু দলিল লেখকরা তা মানতে নারাজ।