নিজস্ব প্রতিবেদক
তীব্র তাপপ্রবাহে সারাদেশের মতো মুন্সীগঞ্জেও জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা। জেলায় তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কড়া রোদ, তীব্র গরম, যানজট, উচ্চ শব্দের হর্ণ সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি শহর জুড়ে। এসবের মাঝেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। রোদের তীব্র উত্তাপে যখন সাধারণ মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে তখন তারা সড়কে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল শনিবার মুন্সীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালনের এমন চিত্র দেখা গেছে।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, এবারের মতো তাপপ্রবাহ এর আগে কখনও দেখেননি তারা। এমনিতেই মুন্সীগঞ্জের মতো ছোটশহরে প্রচন্ড গাড়ির চাপ সামলাতে তাদের নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে বায়ু দূষণের শিকার হতে হয় তাদের। এর মধ্যে চলমান দাবদাহ তাদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তারা শহরের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যরা পানি শূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। অনেক ট্রাফিক সদস্যদের হাই-প্রেশার আছে তাদের এই গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ইউনিফর্ম পরে এ গরমে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরও বেশি সমস্যায় পড়ছেন।
মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকন্ঠে মুক্তারপুরের চৌরাস্তায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট কামরুজ্জামান (৪৫)। কথা হলে তিনি বলেন, চাকরি জীবনে কখনও এত বেশি তাপমাত্রা দেখিনি। পুলিশের চাকরি করি। কষ্ট হলেও মানুষের স্বার্থে সেবা দিতে দায়িত্ব পালন করা আমার কাজ। মুক্তারপুরের সড়কটি এমনিতেই ব্যস্ত সড়ক। এর মধ্যে আমরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এজন্য সবকিছু উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত গরমের জন্য সরকার থেকে আমাদের ছাতা দেওয়া আছে। প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করি। কষ্ট তো হয়। এরপরও শান্তির জায়গা হলো মানুষকে সেবা দিতে পারা।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ট্রাফিক বিভাগে কনস্টেবল ও কর্মকর্তা মিলিয়ে ৩০ জন কর্মরত আছেন। তারা প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দুই শিফটে আট ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে শহরের অন্তত ১০টি পয়েন্টে সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।
জেলা পুলিশ সূত্র আরও জানায়, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ইতিমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ছাতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আব্দুল বলেন, তীব্র দাবদাহে ট্রাফিক সদস্যরা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। তাদের বেশি বেশি পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর ও যানবাহন প্রশাসন (ট্রাফিক বিভাগ) মুহাম্মদ বজলুর রহমান জানান, দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের জন্য খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ছাতার ব্যবস্থা করা আছে। তীব্র তাপমাত্রার মধ্যেও আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। সবমিলিয়ে পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে আমরা সর্তক আছি। এখনো আমাদের মধ্যে তীব্র দাবদাহে কেউ অসুস্থ হয়নি।