গজারিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
গজারিয়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার গজারিয়া উপজেলায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় ১০ কিলোমিটার দৌড়ে ২শত প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ভোর ৬টায় উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে ভবেরচর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স অতিক্রম করে আবার উপজেলা পরিষদে দৌড় প্রতিযোগিতা হয়।
এ প্রতিযোগিতায় অন্যতম অংশগ্রহণকারী গজারিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নেকী খোকন। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সোহান ফোমের সত্ত্বাধিকারী খবির উদ্দিন, ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির, নিপুণ রায় সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছেন এবং সেইসাথে পুরস্কারও জিতেছেন।
গজারিয়ায় ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা বিষয়ে আতাউর রহমান নেকী খোকন বলেন, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রথমবারের মতো গজারিয়ায় ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহফুজসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ এবং সেইসাথে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে শুভেচ্ছা জানাই।
ম্যারাথনে দৌড়ানোর উপকারিতা এবং কেনই বা এ ধরনের দৌড় প্রতিযোগিতা বর্তমানে এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে -এমন প্রশ্নের জবাবে আতাউর রহমান নেকী খোকন বলেন, ম্যারাথনে অংশগ্রহণের পেছনে মানুষের নানাবিধ কারণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে নিশ্চিত কারণটি হলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এ ধরনের দৌড়ের ইতিবাচক প্রভাব। কেউ কেউ হয়তো দুশ্চিন্তা করেন যে অপ্রস্তুত অবস্থায় ম্যারাথনে নামার ফলে শরীর অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কিন্তু যদি কেউ যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে তারপর রাস্তায় নামেন, তাহলে নিঃসন্দেহে সম্ভাব্য ক্ষতির চেয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে সম্ভাব্য লাভের তালিকা। ওজন কমানো কিংবা হৃদপিন্ড ও রক্ত সংবহন তন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ম্যারাথন খুবই কার্যকরী। এছাড়াও গবেষণায় প্রতিনিয়ত উঠে আসছে নিত্যনতুন আরো অনেক উপকারিতা।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা লম্বা দূরত্বের দৌড়ের পেছনের বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি ও বুঝি। যেমন- এ ধরনের দৌড় শরীরের উপর কেমন প্রভাব ফেলে, কিংবা এই দৌড়ের নেপথ্যে কী ধরনের মনস্তাত্ত্বিক উদ্দীপনা কাজ করে। অনেকেই হয়তো ভেবে অবাক হন, কোনো স্বর্ণপদক জয় কিংবা ক্রীড়া ইতিহাসের রেকর্ড বইয়ে নাম ওঠানোর ন্যূনতম সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও মানুষ যোগ দেয় ছোট-বড় যেকোনো ম্যারাথনে। ম্যারাথনে দৌড়ের জন্য শরীরকে উপযোগী করে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিতে হয়। বিনিয়োগ করতে হয় নিজের মূল্যবান সময় ও শক্তি। ঝরাতে হয় ঘাম, করতে হয় অমানসিক পরিশ্রম। ম্যারাথনে দৌড়ানোর ফলে পিছিয়ে যায় ‘আর্টারি এজ’-এর আগমন। অর্থাৎ, যে বয়সের পর থেকে একজন মানুষের করোনারি হৃদরোগের আশঙ্কা সবচেয়ে সর্বাধিক হয়। ইউনিভার্সিটি অব অগসবার্গে অ্যাস্ট্রিড রোয়েহর নেতৃত্বে এক নতুন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, ম্যারাথনে দৌড়ানোর সঙ্গে নাকি মস্তিষ্ক ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতিরও সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ম্যারাথন দৌড়ে এমন একটা তাড়না রয়েছে, সেটি আপনি আর কোনো খেলাতেই পাবেন না। কেননা শুধু একটি ম্যারাথনের পেছনেই যে পরিমাণ সময় ও উদ্যম আপনাকে ব্যয় করতে হয়, তার সামনে খাটো হয়ে যায় যেকোনো ফুটবল বা টেনিস ম্যাচের পরিশ্রম।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজের জীবনকে চ্যালেঞ্জ করি। প্রতিনিয়ত অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। কিন্তু ম্যারাথনে দৌড়ানোর মাধ্যমে আমি মানুষকে দেখাই যে এমনকি প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের পক্ষেও অসাধারণ সব সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ম্যারাথন রেসে দৌড়ানোর সক্ষমতা প্রমাণের ফলাফল হয় সুদূরপ্রসারী। সফল রানাররা ম্যারাথন শেষ করে যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন, সেটি তাদের ভবিষ্যতের যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ জয়ের পথ প্রশস্ত করে।
উল্লেখ্য, ১৮৯৬ সালে এথেন্স অলিম্পিকে প্রথম ম্যারাথন আয়োজিত হয়। সেখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন মাত্র ১৭ জন অ্যাথলেট। প্রথমবার আয়োজিত সেই ম্যারাথনে বিজয়ী অ্যাথলেট তার দৌড় শেষ করেছিলেন ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে। এমনই গুটি গুটি পায়ে, প্রায় শূন্য থেকে শুরু হয়েছিল ম্যারাথনের পথচলা। কিন্তু তারপর থেকে গত ১২৫ বছরে এই ম্যারাথনই পাড়ি দিয়েছে অনেকটা পথ।