আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় অন্তর্র্বতীকালীন রায় আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণার কথা রয়েছে। এই রায়ে নজর রেখেছে বাংলাদেশ ও আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাসিন্দা। গত ১৫ জানুয়ারি আইসিজের রায় ঘোষণার বিষয়ে জানায় গাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়।
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলছে এমন অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমারের নেতৃত্ব দেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ও দেশটির কার্যত সরকার প্রধান অং সান সু চি।
আবুবকর তামবাদু শুনানিতে নৃশংসতার জন্য দায়ী সেনা সদস্যদের বিচার ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর ‘আস্থা রাখা যায় না’ মন্তব্য করে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগ পর্যন্ত অন্তর্র্বতীকালীন নির্দেশনা চান। অন্যদিকে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে সু চি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র আদালতে উপস্থাপন করেছে তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’। গণহত্যার মামলা খারিজ করার আবেদন জানান তিনি। দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমান রাখেন।
মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্টে সেনা অভিযান শুরু হলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এই পরিস্থিতিতে গাম্বিয়া আরও ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে অন্তর্র্বতীকালীন আদেশ দিতে আইসিজের কাছে আবেদন করে। এই মামলা অনেক বছর ধরে চলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এই অন্তর্র্বতীকালীন আদেশকে আইনি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্তর্ববর্তীকালীন আদেশে যা চেয়েছে গাম্বিয়া
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিচারবর্হিভুত হত্যা অথবা শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ অথবা অন্যান্য যৌন সহিংসতা, বাড়িঘর বা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, ভূমি ও সম্পদ নষ্ট, বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ থেকে বঞ্চিত রাখা বা এমন কোনো ধরনের উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বা এর অংশ বিশেষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শর্ত তৈরি হয় বা ভূমিকা রাখে- এমন কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে মিয়ানমারকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সামরিক, আধা সামরিক অথবা সশস্ত্র অনিয়মিত বাহিনীকে সরসারি নির্দেশনা বা সমর্থনের মাধ্যমে; পাশাপাশি কোনো সংগঠন এবং গোষ্ঠী যা সরকারের নিয়ন্ত্রিত বা নির্দেশিত বা প্রভাবিত যাই হোক না কেন কোনোক্রমেই যেন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটন, ষড়যন্ত্র, সাধারণ মানুষকেএ কাজে নির্দেশনা বা উসকানি বা সহযোগিতা যেমন: বিচারবর্হিভুত হত্যা অথবা শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ অথবা অন্যান্য যৌন সহিংসতা, বাড়িঘর বা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, ভূমি ও সম্পদ নষ্ট, বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ থেকে বঞ্চিত রাখা ও অংশগ্রহণ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে। আবেদনে উল্লেখিত অপরাধের কোনো দুষ্প্রাপ্য বা দুর্গম তথ্য প্রমাণ মিয়ানমার যেন নষ্ট বা পরিবর্তন বা বিকৃত না করে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোনো সদস্য যে সম্ভাব্য গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের শিকার তার নির্দশন কোনোভাবেই পরিবর্তন বা স্থানান্তর করা যাবে না। এটি নিশ্চিত করতে হবে।
মিয়ানমার এবং গাম্বিয়া এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না যাতে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও বিতর্ক আরো জোরালো হয় বা উসকানিমূলক মনে হয়। যাতে পরিস্থিতি জটিলতর রূপ ধারণ করে।
অন্তর্র্বতী আদেশে উল্লেখিত নির্দেশ বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে মিয়ানমার ও গাম্বিয়া পৃথকভাবে আদালতকে অবহিত করবে। নির্দেশ ঘোষণার চার মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা: আজ আইসিজের রায়ে চোখ বাংলাদেশের
আগের পোস্ট