নিজস্ব প্রতিবেদক
লৌহজংয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং একটিমাত্র খাল ভরাট করে তাতে ঘরবাড়ি স্থাপন ও বসতবাড়ি নির্মাণ করে পানির ফোয়ারা বন্ধ করে দেয়ায় গত এক বছর ধরে লৌহজংয়ের কাজির পাগলা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক একর জমিতে সারা বছর পানি জমে থাকায় তাতে কোন আবাদ করা যাচ্ছে না। আর এসব কারণে প্রায় গত এক বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে এসব উর্বর কৃষিজমি।
এলাকাবাসীর দাবি, কাজির পাগলা গ্রামের হাজি বাড়ি থেকে জামে মসজিদ পর্যন্ত এই অর্ধকিলোমিটার খালটির মুখ ভরাট করে এবং যে যার মত করে সুবিধানুযায়ী বাড়ির পাশের খালটির পুরো অংশ ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরী এবং দখল করে নিয়েছে। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। গত একবছর আগেও খালটি দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে কাজির পাগলা গ্রামের পাশেই দক্ষিণ পাইকসা গ্রামের বড় খালে গিয়ে পানির স্রোত মিলিত হতো। বর্তমানে খালটির মুখ বন্ধ করে পুরো খালটি ভরাট করায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত শত কৃষক জমি থাকা সত্ত্বেও এখন বেকার হয়ে পড়েছে।
কাজির পাগলা গ্রামের বাসিন্দা ননী বেপারী (৫৫) জানান, কাজির পাগলা হাজী বাড়ি থেকে খালটির শুরু। এই খালটি বহু পুরনো একটি খাল। এই খালটি দিয়ে এই এলাকার সমস্ত কৃষিজমির পানি নিষ্কাশন হয়। একটি প্রভাবশালী মহল নিজ স্বার্থে খালের মুখ ভারাট করে প্রথমে বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করলে এরপর থেকে পুরো খালটি ভরাট করে যার যার সুবিধামতো দখল করে নিয়ে তাতে বাড়িঘর নির্মাণ করে খালের পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে থাকে। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা ডুবে যায়।
জুলহাস হোসেন শেখ জানান, খালের মুখটি প্রথম বন্ধ করা হয়। এরপর থেকে সমস্ত খাল ভরাট করে দখল বাণিজ্য চলে। আমরা দ্রুত খালটি দখল মুক্ত চাই। পানি নিষ্কাশন করে আমাদের কৃষিজমিতে চাষাবাদ করার সুযোগ করে দেয়া হউক।
মো. তুহিন মাঝি জানান, স্থানীয় বিএনপি নেতা জি এম কামাল খালটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। আমরা এলাকাবাসী বাঁধা দিলেও তিনি মানেননি। এই খালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন জমির পানি কোথাও সরছে না। সারা বছর কৃষিজমি পানিতে ডুবে থাকছে। এতে কোন ফসল করা যাচ্ছে না। এই খালটি বন্ধ হওয়ায় এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকায় এলাকার কয়েক’শ কৃষক বেকার হয়ে পড়েছে। তাই আমাদের দাবি, এই খালটি দ্রুত খনন করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করে কৃষকদের রক্ষা করা হউক।
হাওয়া নূর বেগম জানান, আমার স্বামী নেই। আমি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে একটি জমিতে ধান চাষ করে কোনরকম করে পরিবারটি চালাতাম। এখন খালটি বন্ধের কারণে গত এক বছর যাবৎ জমিতে পানি জমে থাকায় কোন চাষাবাদ করা যায় না। আমি পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে বসেছি।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল কাজির পাগলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পানি প্রবাহের একমাত্র রাস্তা খালটির মুখ বন্ধ করে তাতে বালু ফেলে ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও গাছের চারা লাগিয়ে যার যার সুবিধামতো দখল করে নিয়েছে। আবার কেউ খালের উপর পিলার দিয়ে বসবাসের জন্য দালান নির্মাণ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইলিয়াস শিকদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে এলাকাবাসী মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের সচিব ও ভূমি অফিসের নায়েবকে অবহিত করলে তারা বিষয়টি আমাদেরকে অবহিত করেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি, ঘটনার সত্যতা প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।