নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে যাত্রীদের হয়রানি ও রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে দখল দেখার কেউ নেই। খিদিরপাড়া ইউনিয়ন ক্ষেতেরপাড়া বালিগাঁও থেকে ঢাকা প্রায় ৫২ কিলোমিটার। যাত্রীদের ভাড়াও গুনতে হয় ৯০ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির পুরনো গাড়ি কিনে রঙ করে ঝকঝকে তকতকে বানিয়ে গাংচিল পরিবহন নামে দেয়া হয়। সড়ক পথে বিমানের ছোঁয়া তাদের পরিবহনে লিখে সড়ক দাপিয়ে বেড়ালেও যাত্রী সেবার বালাই নেই। অথচ এই রুটে মাসে কমপক্ষে কোটি টাকার বাণিজ্য করছে এই পরিবহন সংস্থাটি। লৌহজংবাসী গাংচিল হয়রানি হচ্ছে দেখার কেউ নেই। বর্তমানে আসন পূর্ণ করার নামে পুরো রাস্তায় যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। পদ্মার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ, ব্যবসা, চাকুরী, পড়াশোনাসহ নানা কারণে মানুষ ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু এই পরিবহন নিয়ে এই সড়কে চলাচলকারীদের অভিযোগের শেষ নেই। একরকম বাধ্য হয়ে গাংচিল পরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। বিকল্প না থাকায় গাংচিল পরিবহনের যন্ত্রণা নিয়ে যাত্রীদের আসা-যাওয়া করতে হয়। লৌহজংয়ে অন্য কোন বেসরকারী পরিবহন না থাকায় গাংচিল পরিবহনের যাত্রীদের সেবার মান শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে। এছাড়া গাংচিল পরিবহনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। মূলত মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এই গাংচিল পরিবহনের মূল নিয়ন্ত্রক। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০টি গাড়ি বালিগাঁও থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে বালিগাঁও চলাচল করে। প্রতিটি পরিবহনে আসন সংখ্যা ৪১/৪২টি।
যাত্রী সেন্টু, বাবুল, আওলাদ বেপারী জানান, প্রায় অনেক সময় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এই পরিবহনটি চলাচল করে এবং সামান্য মালামাল থাকলে আদায় করেন অতিরিক্ত ভাড়া। এক যাত্রী মোঃ রাজু জানান, তিনি ঢাকা নয়াবাজার থেকে ইষ্টান ফ্যান নিয়ে গাংচিল পরিবহনে উঠলে পরিবহন শ্রমিক তার কাছে অতিরিক্ত ১৫০ টাকা ভাড়া দাবী করে তা না হলে গাংচিল তাকে যাত্রী হিসেবে নিবে না।
সে মোট ২৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে মালিরঅংক নামেন। আকলিমা নামে আরেক যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে গাংচিল পরিবহনে আসলাম এখন কানে কিছুই শুনিনা, পুরাতন ও খাটারা গাড়ির শব্দে কান আমার শেষ। ঘোলতলী, উপজেলা হাসপাতাল রোড, হাটভোগদিয়া, বালিগাঁও ব্যস্ত প্রধান সড়কগুলোতে রাস্তার উপরে গাংচিল পরিবহন রাখার ফলে ভোগান্তি হাজার হাজার মানুষের। রাস্তার উপর বেপরোয়াভাবে গাড়ি রাখার কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে দূর্ঘটনা। যানজট লেগেই আছে প্রতিদিন। জরুরী রোগী এবং লাশবাহী পরিবহনও বাদ যাচ্ছে না। প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ অনেকেই এখান দিয়ে আসা যাওয়া করে কিন্তু তাদের নীরবতায় প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহলের অনেকেই।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। সাধারণ সম্পাদক মোঃ মতি মাদবর মেম্বারের কাছে বেপরোয়া গাংচিল গাড়ি রাখার ও যাত্রীদের হয়রানির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুটা যাত্রীদের মুখে শুনেছি এবং গাড়ির সাথে থাকা শ্রমিকদের শর্ত করে দিয়েছি। এছাড়া আমরা গাড়িগুলো অতি দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছি। আমরা রাস্তায় গাড়ি রাখি খুব অল্প সময়ের জন্য।
সাধারণ সম্পাদক এসব কথাই বলে, কিন্তু গাড়ি সরিয়ে নেন না। দীর্ঘদিন গাড়ি রাস্তায় পড়ে থাকে। সাধারণ মানুষ তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ে ভয়ে কেউ কথাও বলে না। দিন দিন বেড়েই চলছে যানজট ও দূর্ঘটনা। মানুষ কার কাছে গিয়ে বলবে এই প্রশ্ন থেকেই যায়। লৌহজং উপজেলাবাসী এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া ও কঠোর হস্তক্ষেপ কামনায় বিশেষ অনুরোধ করেন।
লৌহজং থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, কোন গাড়িই দীর্ঘদিন রাস্তায় পার্কিংয়ের সুযোগ নেই। আমরা যথাযথভাবে গাড়ি রাখার নিদর্শন দিয়েছি। তবু অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে আমরা চেষ্টা করছি রাস্তা দখল মুক্ত রাখার। এছাড়া আমরা লক্ষ্য রাখছি রাস্তায় দীর্ঘসময় পার্কিংয়ের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।