নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জেরে একটি দরবার শরীফের ঘর, টয়লেট ও বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ মজিবুর ফকিরের বিরুদ্ধে।
গত সোমবার সকালে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের ঘোড়াকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দরবারের বর্তমান গদিনসীন জালাল সরদার বাদি হয়ে মৃত সোনা উদ্দিন ফকিরের ছেলে মজিবুর ফকির (৭০) ও তার ছেলে নাহিদ ফকির (৩৩)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। লৌহজং থানার উপ-পরিদর্শক এস আই আলাউদ্দীন অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাদী জালাল সরদার বিবাদী মজিবুর ফকিরের নিকট থেকে বিগত ১৯৯৮ সালে ১১ শতাংশ জায়গা ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সাঈদ শাহ পাক দরবার শরীফের জন্য ক্রয় করিয়া সমুদয় টাকা বর্ণিত বিবাদী মজিবুর ফকিরকে জালাল সরদার বুঝাইয়া দেয়। পরবর্তীতে বিবাদী ক্রয়কৃত জায়গায় মৌখিকভাবে আমাকে বুঝাইয়া দিলে হাটখোলা সিনহা বাড়ী সংলগ্ন উক্ত জায়গাতে একটি মাজার শরীফসহ চারদিকে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে অদ্যবধি পর্যন্ত ভোগ দখলে আছি। পরবর্তীতে আমি বিবাদীকে আমার ক্রয়কৃত জায়গা রেজিষ্ট্রি করিয়া দিতে বলিলে বিবাদী আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু রেজিষ্ট্রি করিয়া দিবে বলিয়া কালক্ষেপণ করিয়া ঘুরাইয়া আসিতেছে। গত রোববার রাত ১১টার দিকে আমি লৌহজং থানাধীন হাটখোলা কলাম সিংহা বাড়ী সংলগ্ন সাইদ শাহ দরবার শরীফ জিয়ারত করিতে গেলে বর্ণিত বিবাদীদ্বয় আমাকে দেখিয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকে। এসময় আমি বিবাদীদ্বয়কে গালিগালাজ করিতে নিষেধ করিলে বিবাদীদ্বয় হুমকি দিয়া বলে যে, কাল সকাল হওয়ার সাথে সাথে দরবার শরীফের সকল স্থাপনা ভাংচুর করিয়া নিয়া যাবে, নতুবা সকালে আমি আমার লোকজন নিয়া ভাংচুর করিয়া ফেলিব। পরবর্তীতে সোমবার সকালে দরবার শরীফে গেলে দেখি যে, দরবার শরীফের টয়লেট, তিন পাশের টিনের বেড়া ও বাউন্ডারী দেয়ালের কিছু অংশসহ বিভিন্ন মূলবান জিনিসপত্র ভাংচুর অবস্থায় আছে। এতে করিয়া প্রায় ৯০ হাজার টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আমি দরবার শরীফের বিভিন্ন মূলবান জিনিসপত্র ভাংচুর দেখিয়া বিবাদীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে বিবাদীগণ আমাকে হুমকি দিয়া বলে যে, এই বিষয় নিয়া কোন থানা পুলিশ বা স্থানীয় লোকজনকে জানাইলে প্রাণে মারিয়া লাশ গুম করিয়া দিব।
প্রতিবেশিরা বলেন, শুনেছি ২৫ বছর আগে জমিটি মজিবুর ফকির ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে, কিন্তু লিখে দেয়নি। এভাবে না ভেঙে উভয়পক্ষ সমাধান করতে পারতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন বলেন, আমরা ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত এ দরবারে ওরশ মাহফিল হতে দেখছি। মাসে মাসে সিন্নি বিতরণ করা হয়। কিছুদিন আগে অজ্ঞাতরা আগুন লাগিয়েছিলো। শুনেছি, জমি নিয়ে মজিবুর ফকিরের সাথে লেখালেখি নিয়ে ঝামেলা চলছে, তাই ভেঙে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মজিবুর ফকিরের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার জমি তাই ভেঙে দিয়েছি। তারা এই জমির কোন কাগজপত্র দেখাতে পারবে না। আমি শুধু তাদের কবরটুকু করার জন্য জমি দিয়েছি। মাজার করার জন্য দেইনাই। তিনি আরো বলেন, খবর নিয়ে দেখেন এখানে তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে মাজার পূজা করে, গান-বাজনা করে।
এ ব্যাপারে কলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব শেখ বলেন, দরবার ভাঙার ঘটনা আমি শুনেছিলাম। পরে মেম্বার পাঠিয়ে খবর নিয়ে জানতে পারি, দেয়াল ও ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। শুনেছি, জালাল ৯০ দশকে জমিটি ক্রয় করেছিলো। এখানে তার বাবাকে কবর দিয়েছে। প্রায় ২০ বছর যাবত এখানে ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠান হয়। আমি নিজেও এই অনুষ্ঠানে অনেকবার দাওয়াত পেয়েছি। এই জমিটি মূলত মজিবুর ফকিরের না। শুনেছি, মজিবুর ফকির বিক্রি করেছে। ২৫ হাজার টাকা নিয়ে জমি লেখে দেয় না বলে জালাল আমাকে জানিয়েছিলো। আমি মজিবুর ফকিরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সে বলেছে, আমি কবর দেয়ার জন্য শুধু ১০ হাজার টাকা নিয়েছি।
এ বিষয়ে লৌহজং থানার তদন্ত অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।