নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্বল্পমেয়াদি ও আগাম জাতের আমন ধানের কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। অনেকেই বলছেন, এ বছর ফলন বেশি ভালো। মনের আনন্দে কৃষকেরা কাটছেন বহুল প্রতীক্ষিত এই ধান। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকের ঘরে আশ্বিন-কার্তিক মাসের মৌসুমী অভাব দূর হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মুন্সীগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরাসরি বপন করে ১০৫-১০৮ দিনের মধ্যে এ ধান কাটা যায়। যেখানে অন্য যেকোনো জাতের ধান পাকতে সময় লাগে কমপক্ষে ১৪৫ দিন। প্রতি বছর এ অঞ্চলে মোট আমন আবাদের কমপক্ষে ২০ ভাগ জমিতে স্বল্পমেয়াদি ও আগাম জাতের ধান চাষ হয়। এতে নিজেদের খাবার জোগানের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট নিরসন হচ্ছে। এছাড়া আশ্বিন-কার্তিক মাসের কর্মহীন সময়ে কর্মসংস্থান হচ্ছে কৃষি দিনমজুরদের।
মৌসুমের শুরুতে বৈরী আবহাওয়া ও নানা প্রতিকূলতার পরও মাঠে মাঠে আগাম রোপণ করা স্বল্পমেয়াদি আগাম ধান কাটতে পারায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে কৃষকের মধ্যে। চালসহ দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে যখন নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, ঠিক তখনই আগাম ধানে অভাব দূর হয়েছে অনেক কৃষকের।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত আগাম ধান চাষ পদ্ধতি ও শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ জেলায় মঙ্গা নিরসন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও খাদ্য উদ্যোগ নেয়। মঙ্গার সময় ঘরে তোলা যায় এমন আগাম ও স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে এ অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মুন্সীগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে এই জেলার ৬টি উপজেলায় জমিতে চারা লাগানো হয়। যা আবাদ করা ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবুজ আমন ক্ষেতের মাঝে চোখে পড়ে সোনালি রঙের পাকা ধানের ক্ষেত। প্রচলিত ধানের ক্ষেতের (বিআর-১১ স্বর্ণা) মাঝে স্বল্পমেয়াদি ও আগাম জাতের পাকা ধান উঁকি দেওয়ায় যেন পাল্টে গেছে চিরায়ত দৃশ্য। মনের আনন্দে কৃষকেরা কাটছেন আগাম এই ধান।
বেজগাঁও ইউনিয়ন ছত্রিশ গ্রামের কৃষক মো. সালামত শেখ, মো. ফারুক, নূরজাহান বেগম বলেন, দু’একদিনের মধ্যে আমাদের ধান কাটতে পারবো। পাকা ধানের ক্ষেত দেখিয়ে তারা বলেন, পরিবারে সবাই এ ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছি। চাউলের যে দাম এ ধান না হলে অনাহারে দিন কাটাতে হতো। আমারা কি যে করতাম কোন উপায় ছিল না।
গাঁওদিয়া ইউনিয়নের পালগাঁও গ্রামের কৃষক মো. ইউনুছ পাঠান, মো. মিলন, মো. ফরহাদ মৃধা ব্রি-৩৩ জাতের ধান কাটছিলেন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তারা বলেন, ফলন কম হয়েছে। তবে চাউলের বাজারে দাম বৃদ্ধি কিছুটা সহায়ক হবে। আশ্বিন-কার্তিক মাসের অভাব অনেকটা পূরণ হবে। সেইসঙ্গে গো-খাদ্যের সংকট নিরসন হবে বলে জানান তারা।
লৌহজং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, এ বছর লৌহজংয়ের অনেক কৃষক আমাদের কাছ থেকে ধানের বীজ নিয়ে ফলন করেছেন। তাদের ধান ক্ষেতগুলো এখন পাকা ধানে ভরা। আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, অনেকের এলাকায় সব ধানের ফলন ভালো। এছাড়া আমাকে অনেকেই মোবাইল ফোনে জানান, তাদের ফলন এ বছর বেশ ভালো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে বেশি হওয়ার আশা প্রকাশ করছি।
লৌহজংয়ে ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষক ; এ বছর ফলন বেশ ভালো
আগের পোস্ট