নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢেউয়ের কারণে পাড়ের মাটি ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দা অনেকটা আতঙ্কে রয়েছে। তবে পদ্মা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন অংশে নদী রক্ষা বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি। এ বছর বর্ষার আগে বাঁধের কাজ সম্পন্ন না হলে আসছে বর্ষায় এই এলাকা নদীগর্ভে চলে যাবে। বালি ভর্তি জিও ব্যাগ কোন কাজে আসবে না।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বেজগাঁও, গাঁওদিয়া, কনকসার এবং লৌহজং-তেউটিয়ার বিভিন্ন অংশে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, এখন শুকনো মৌসুমে নদীর পানি পাড়ের অনেক নিচে। পাড়ের মাটি ভেঙে নদীতে পড়ছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদীটিতে জোয়ার ভাটা হয়। জোয়ারে নদীর পানি পাড়ে এসে পৌঁছে। এসময়ে নদী দিয়ে ভারি নৌযান চলাচলের সময়ে নদীর ঢেউয়ের পাড়ের মাটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। বৃষ্টি হলেও ভাঙন হয়। মূলত নদীর ঢেউয়ে ভাঙনের সৃষ্টি। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হলেও লৌহজং-তেউটিয়া এবং কনকসারের মাঝামাঝি এই অংশটিতে কোন কাজই করা হয়নি।
এলাকাবাসী বলেন, এই অংশের নদী রক্ষা বাঁধ তৈরি ঠিকাদার অনেক আগে কাজ করেছে ২০১৪ সালে। তবে পদ্মার এই পাড়ে রয়েছে উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) অফিস।
লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা লাকী আক্তার বলেন, আমি প্রতিদিন আমার সংসারের বিভিন্ন কাজ-কর্মে এই নদীর পানি ব্যবহার করে থাকি। নদীটি আমার এই স্থান থেকে অনেকটা দূরে ছিল। এখন ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির কাছে এসে পড়েছে। এখানে অনেক আগে নদী ভাঙন শুরু হয়। মাঝেমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধ তৈরি করা হয়, কিন্তু পাড়ের মাটি ভেঙ্গেই পড়ছে। আমাদের বাড়ি-ঘর যদি ভেঙ্গে যায় কোথায় যাবো আল্লাহ জানে একমাত্র। সরকার যদি ভাঙন প্রতিরোধে একটি বাঁধ তৈরি করে দিতো না খেয়ে রাতে ঘুম ভালো হতো। আমাদের ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিশেষ অনুরোধ করছি।
একই এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা জানান, ঘর-বাড়ি নদীতে ভেঙে নিয়ে গেলে যাব কোথায়? তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে বলেন, ভাই একটু লিখে উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একটু জানান। আমার ভিটামাটি হারিয়ে গেলে কোথায় যাব? মাথা গোঁজার আর ঠাঁই থাকবে না। সব জায়গায় কম বেশি জিও ব্যাগ ফেলে নদী রক্ষা প্রতিরোধ বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। আমাদের এই অংশে এখানো কেন কাজ হচ্ছে না? কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এখানে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য অনুরোধ করছি।
গোবিন্দ চন্দ্র বলাই বলেন, আমি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। নদীর পাড় থেকে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করি। আমি যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছি এখান থেকে অনেক দূরে নদী ছিল, ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির পাশে এসে পড়েছে। বাড়িটুকু কবে যেন হারিয়ে ফেলতে হয়।
নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘুরতে আসা কমল রাজবংশী বলেন, দেড় বছর পর এখানে আসলাম। এই নদী তো অনেক দূরে ছিল। এখানে একটি চর ছিল, বাড়িঘর ছিল, এগুলো কোথায় ভাই? তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে কোন কাজ হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনাদের পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। মাথা গোঁজার মাটিটুকু হারাতে চাই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, নদীর পাড়ে কিছু অবৈধ ড্রেজিং বাণিজ্য হয়। যার কারণে অসময়েও নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সবই জানে। তারা ম্যানেজ হয়ে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে। আমি একবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এখানে এসে বসবাস করছি। মনে হচ্ছে, আবারো ভিটেমাটি হারাতে হবে। সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসটি কিন্তু এখানেই। তারা দেখেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ভাঙন সৃষ্ট স্থানটি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। আমি নিজে দাঁড়িয়ে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ দেখভাল করছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নদী তীরবর্তী স্থানগুলোতে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমার জানা মতে, খুব শীঘ্রই নদী রক্ষা প্রতিরোধের বাঁধের কাজ এবং ব্লক পাথর ফেলে নদী রক্ষা বাঁধ তৈরির কাজ খুব দ্রুতগতিতে শুরু করা হবে।