নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে চোরের উপদ্রব বেড়েছে। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন ও মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের চার থেকে পাঁচটি গ্রামে চোরচক্র রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে গেছে মোটরসাইকেল, বিভিন্ন দামি আসবাবপত্র, নগদ টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে চোর চক্র। মৌছামান্দ্রা গ্রামের বাসিন্দারা সবচাইতে বেশি এ চোর চক্রের শিকার হয়েছে। টিনের ঘরের পাশাপাশি ইট সিমেন্টে ঘেরা বিল্ডিংয়ের মাত্র ১০ ইঞ্চি এডজাস্টার ফ্যানের ফাঁক দিয়ে বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে চুরি করে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বাড়ির মালিকদের। নেশাগ্রস্ত কিশোররা দলবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ এই চোরচক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রথমে উপজেলার মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের কাজিরপাগলা সিতারামপুর এলাকায় প্রায় প্রতি রাতেই চুরির ঘটনা শোনা যেতো।
উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা ইসলামের বাড়ি সিতারামপুরে। তিনি জানান, কাজিরপাগলা সীতারামপুর গ্রামে প্রায় প্রতি রাতেই চুরি হচ্ছে টাকা-পয়সা, দামী অলংকার, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এমনকি হাড়ি-পাতিলও বাদ দেয় না এই চোর চক্র।
এদিকে হলদিয়া ইউনিয়নের মৌছামান্দ্রা গ্রামে কয়েকটি বাড়িতে পরপর চুরির ঘটনা ঘটে। প্রথমে মোঃ রুবেল খানের গরুর খামার থেকে দুই দুইবার এই চোর চক্র পিকআপ নিয়ে এসে পিকআপ দিয়ে গরু চুরি করতে সফল হয়েছে। এরপর ইজিবাইকের গ্যারেজের দারোয়ানকে বেঁধে চারটি ইজিবাইক নিয়ে যায় চোরেরা। পনেরো দিন আগে গ্রামের ভিতরে ঘরের মধ্যে তালা লাগানো অবস্থায় থাকা ইজিবাইক চুরি করে নিয়ে যায় এই চোর চক্র। এ ব্যাপারে লৌহজং থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক মোঃ শহিদ সুরুজের মোটরবাইকটিও বাদ দেয়নি এই চোর চক্র। এদিকে গত সপ্তাহে শিমুলিয়ায় রড সিমেন্টের একটি দোকান থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকার মালামাল পিকআপে করে লুট করে নিয়ে যায় চোরেরা।
সর্বশেষ মৌছামান্দ্রা চোকদার বাড়ি দিপু শেখের তিনতলা বিল্ডিংয়ের রান্নাঘরের এডজাস্টার ফ্যানের ১০ ইঞ্চি ফাঁক দিয়ে বিল্ডিংয়ে চোর প্রবেশ করে ভিতরে থাকা আলমারি খোলার চেষ্টা করে সাথে থাকা সেলাই রেঞ্জ দিয়ে। বিল্ডিংয়ের মালিক চোরের উপস্থিতি টের পেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোর বুঝতে পারে এখন মালিক তাকে ধরে ফেলবে। তাই চোর বিল্ডিংয়ের কেচি গেইট খোলার চেষ্টা করে সেটা খুলতে ব্যর্থ হলে ঘরের মধ্যে এলোমেলোভাবে দৌড় শুরু করে। একপর্যায়ে ঘরের মালিক চোরকে পিছন দিক দিয়ে জাপটে ধরলে চোর অনেক ধস্তাধস্তি করে পাশে থাকা দরজা খুলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় চার্জে থাকা একটি মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, বিল্ডিংয়ের ভিতর ঢুকে যেহেতু চোর চুরি করতে পেরেছে তাহলে আমরা কেউ এই চোরের কাছ থেকে রেহাই পাবো না। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, লৌহজং থানার রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা রাতে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করলে আমরা এই চোরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবো।
লৌহজং থানা তদন্ত অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ওই এলাকাগুলো থেকে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। গভীর রাতে চুরিগুলো সংঘটিত হওয়ায় এখনো আমরা কাউকে সনাক্ত করতে পারিনি। তবে আমাদের ফোর্স কাজ করছে। আশা করি, শীঘ্রই ওখানকার চুরি উপক্রমের সাথে জড়িতদের আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।