নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় গতকাল রবিবার বিকালে বিক্রমপুর জাদুঘরকে শত বছরের পুরাতন স্যাক্সোফোন দান করেছেন শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল গ্রামের শ. ম মিজান। জ্যাজ এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত এই বাদ্যযন্ত্রটি জাদুঘরকে দান করেন শ. ম মিজানের পক্ষে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন শ্রীনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুজিব রহমান। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালেক ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ঝর্ণা রহমান, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের লৌহজং উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ কবির ভূঁইয়া কেনেডি, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন মুন্সীগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু হানিফ, শ্রীনগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মুজিব রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ বেপারী, লৌহজং শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামসহ উল্লেখিত সবাইকে নিয়ে বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ পুরনো দুর্লভ এই স্যাক্সোফোনটি বিক্রমপুর জাদুঘরের পক্ষে গ্রহণ করেন। শত বছরের পুরনো বিরল এই বাদ্যযন্ত্রটি জাদুঘরকে দান করায় শ. ম মিজানেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
আবিষ্কারকের নামানুসারে এই বিশেষ বাদ্যযন্ত্রের নাম রাখা হয় স্যাক্সোফোন। স্যাক্সোফোন হলো একটি একক যন্ত্র হিসাবে জ্যাজ সঙ্গীতের ইতিহাসে পুরনো একটি পরিচিত বাদ্যযন্ত্র। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও এটি একটি শক্তিশালী বাদ্যযন্ত্র। বিশেষ করে ফরাসি সুরকারদের কাছে এটি চেম্বার সঙ্গীত, অর্কেস্ট্রা, এমনকি একটি একক যন্ত্র হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। স্যাক্সোফোন জার্মানিতে বর্ণবাদ এবং রাশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদের ভয়ের প্রতীক। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন জ্যাজ সঙ্গীত আসে, তখন এটি কালো আমেরিকান মুক্তির জন্য একটি কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। রলিন্স বলেছেন “জ্যাজ সত্যিই একটি কালো আর্টফর্ম”। স্যাক্সোফোন জ্যাজের কেন্দ্রবিন্দু, তিনি বলেছেন যে যন্ত্রটি প্রায় প্রতিনিধিত্ব করে।
বিশেষত ক্ল্যাসিক ও জ্যাজ সংগীতের অন্যতম প্রধান বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কারক অ্যাডলফ স্যাক্স বেলজিয়ামের একজন বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কারক এবং বাদ্যশিল্পী যিনি প্রথম স্যাক্সোফোন আবিষ্কার করে বিশ্বের সঙ্গীতের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে আছেন। তিনি মূলত বাঁশি এবং সানাইবাদক ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে তার এই আবিষ্কার জীবদ্দশায় তাকে স্বীকৃতি না দিলেও মৃত্যুর পরে জ্যাজ ঘরানার সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে তিনি প্রভূত সমাদৃত হন। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী জোয়াকিম প্যাটনিয়ার এর পাশাপাশি বেলজিয়ামের দিনাঁ শহর অ্যাডলফ স্যাক্সের স্মৃতি আজও বহন করে চলেছে।
১৮১৪ সালের ৬ নভেম্বর বেলজিয়ামের দিনাঁ শহরে অ্যাডলফ স্যাক্সের জন্ম হয়। সেসময় ঐ শহরটি ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার আসল নাম অ্যান্টনি জোসেফ স্যাক্স। বাবা চার্লস জোসেফ স্যাক্স এবং মা মেরি জোসেফ ম্যাসন-এর এগারোটি সন্তানের মধ্যে সবার বড়ো ছিলেন অ্যাডলফ স্যাক্স। যদিও তার ছয় ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে চারজন বেঁচে ছিলেন। বাকিরা খুবই অল্প বয়সে মারা যান। তার শৈশবকাল খুব একটা স্থিতিশীল ছিল না। কখনো তিনতলা সমান উঁচু ছাদ থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পাওয়া, কখনো লোহা গলানোর গরম কড়াইতে পড়ে গিয়ে এক পাশ পুড়িয়ে ফেলা কিংবা নদীতে ডুবে গিয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তার মা তাই তাকে ‘এক দূর্ভাগা শিশু’ বলতেন আর পাড়া-প্রতিবেশিরা সকলে ‘ছোটো ভূত’ বলে ডাকতেন। তার বাবা চার্লস জোসেফ স্যাক্স ছিলেন মূলত একজন ক্যাবিনেট- নির্মাতা যিনি একটি ডাচ আর্মি ব্যান্ডের জন্য বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে সরবরাহ করতেন। তার বাবার একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানাও ছিল ব্রাসেলসে। শৈশবে হেসে-খেলে কাটানোর বয়সে অ্যাডলফ স্যাক্স তার বাবার কারখানায় দিনাঁর একজন শিক্ষক এবং তার এক কাকার সাহায্যে সহজেই বাদ্যযন্ত্র নির্মাণের কৌশল রপ্ত করে ফেলেন। ছেলের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তির স্ফূরণ দেখে চার্লস জোসেফ স্যাক্স অ্যাডলফকে তার কর্মশালায় শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগ করেন। প্রথাগত পড়াশোনার বাইরে অ্যাডলফ স্যাক্স সঙ্গীত বিষয়ক পড়াশোনা শুরু করেন ১৮২৮ সালে ব্রাসেলসের রয়্যাল স্কুল অফ মিউজিক থেকে। তার সৃষ্টিগুলোর মধ্যে রয়েছে স্যাক্সোট্রোম্বা, স্যাক্সহর্ন এবং স্যাক্সটুবা। ১৮৯৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় এই সুরস্রষ্টা মৃত্যুবরণ করেন।