নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ কর্তৃক ধাক্কা দিয়ে অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী ‘এমভি সাবিত আল হাসান’ নামে লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দিয়ে ৩৪ জনের প্রাণহানির ঘটনায় কার্গো জাহাজের বেপরোয়া গতি ও নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ত্রুটিপূর্ণ নকশাকে দায়ী করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে নদীর মাঝখানে নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পিলার স্থাপন করা এবং নৌপথে প্রতিবন্ধকতামূলক নির্মাণ সামগ্রী রেখে নৌপথ সরু করে ফেলাকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সদর উপজেলার সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় একটি কার্গো জাহাজ ধাক্কা দিয়ে অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী ‘এমভি সাবিত আল হাসান’ নামে লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ লাশ ছিলো মুন্সীগঞ্জের। ওই দিন রাতে লঞ্চ ডুবে ৩৪ জন নিহতের ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও ঘটনার রাতে জেলা প্রশাসনের ৭ সদস্য ও বিআইডব্লিউটিএ’র ৫ সদস্যের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ এপ্রিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে আরো একটি ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৮ এপ্রিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গণশুনানীতে ২৬ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছে। এর মধ্যে নৌপরিহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি গত সোমবার নৌসচিব মেজবাহ্ উদ্দীন চৌধুরীর কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনারোধে কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ২৩টি সুপারিশ করা হয়েছে। ২৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসকে এল -৩ কার্গো জাহাজটির বেপরোয়া গতি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। চালকের বেপরোয়া গতি, অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে সেতুর পিলার সরিয়ে নদীর প্রশস্ততা বাড়ানো, ছোট আকারের সাংকেন ডেকবিশিষ্ট লঞ্চ ক্রমান্বয়ে সরিয়ে নেওয়া, যেখানে সেখানে অলস জাহাজ নোঙর ও লোড আনলোড বন্ধ করা, চালকদের দক্ষ ও সচেতন করতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা, সার্ভেয়ারের সংখ্যা বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই তদন্ত প্রতিবেদনটিতে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এসকেএল-৩ জাহাজটি প্রথম শ্রেণির মাস্টার ওয়াহিদুজ্জামান ও ডুবে যাওয়া লঞ্চটি তৃতীয় শ্রেণির চালক জাকির হোসেন চালাচ্ছিলেন। কার্গো জাহাজটির নিবন্ধন থাকলেও সার্ভে অনুমোদন ছিল না।
তদন্ত প্রতিবেদনে এসকেএল-৩ নামক পণ্যবাহী জাহাজের মাস্টার ও ড্রাইভারের জবানবন্দি, ডুবে যাওয়া লঞ্চ সাবিত আল হাসানের মাস্টার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে।