নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো শীতের তীব্রতা অতটা অনুভূত না হলেও বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আশা শত শত শিশু আর বয়স্ক রোগীদের সিরিয়াল। গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রাম থেকে একমাস সাতদিন বয়সী ছেলে তাহসিনকে নিয়ে এসেছেন মুক্তা বেগম। কি হয়েছে জানতে চাইলে বললো, ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি। আনারপুরা থেকে আফজাল হোসেন তাঁর দু’বছর বয়সী কন্যা আদিবা, চর বাউশিয়ার লিপি বেগম এসেছেন আড়াই বছর বয়সী কন্যা জান্নাত, রসুলপুর থেকে চম্পা রানী এসেছেন এক বছরের কন্যা ভাগ্যশ্রীকে নিয়ে প্রত্যেকের প্রায় একই সমস্যা ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, সাথে পাতলা পায়খানা। বয়স্কদের সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা সত্তরোর্ধ্ব টেঙ্গারচর গ্রামের মইজ উদ্দিন বেপারীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রচন্ড হাঁটু আর কোমর ব্যথায় ভুগছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেল্পডেস্কে খবর নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ যাবৎ তুলনামূলক রোগীর সংখ্যা বেশী। অন্যান্য সময় যখন দৈনিক শিশু রোগীর গড় সংখ্যা ছিল ৬০/৬৫ জন সেখানে বর্তমান গড় ৮০/৮৫ জন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আফরোজা ফেরদৌসী বলেন, শীতের এই সময়টায় ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলোই বেশি দেখা যায়। যেমন- কাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, সাময়িক জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি। এসময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের কাশি, কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক সময়ে সনাক্ত করা না গেলে সেটা অনেক সময় নিউমোনিয়াতেও রূপ নিতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, মানুষ এখন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার মান ও সেবা নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। তাই সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে মুখোমুখি হই ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ডাঃ মুবাশ্বিরা বিনতে আলম এর সাথে। শীতকালীন রোগ সংকান্ত বিষয়ে তিনি জানান, শীতকালে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বেশী দেখা দেয়। সেই সাথে বয়স্ক মানুষের হাড় ও সন্ধিব্যথায় চিকিৎসা নেওয়ার হার অন্য সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। শীত এলে বাতব্যথার রোগীদের ব্যথা বাড়ার পেছনে কিছু কারণ আছে বলে ধারণা করা হয়। যেমন শীত বা ঠান্ডায় আমাদের পেইন রিসেপ্টর বা ব্যথার অনুভূতি গ্রহণকারী কোষগুলো বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এসব মিলিয়ে শীত এলে বাতব্যথার রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ে। হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি জানান, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ রয়েছে। তবে নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি গার্ডের অভাব রয়েছে। নিরাপত্তা প্রাচীর (দেয়াল) এর সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। হাসপাতালের সম্মুখের রাস্তা ও ড্রেনেজের কাজ হওয়াও দরকার। তবে আমাদের উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাসপাতালের বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। ইতিমধ্যে উনারা হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।