নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর এ অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগটি উঠেছে বাঘড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত তহশিলদার মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে। এই দুর্নীতিবাজ তহশিলদারের খপ্পরে পড়ে সেবা নিতে আসা জনসাধারণের ভোগান্তি এখন চরমে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং সঠিক তদারকি না করার ফলে বছরের পর বছর আল-আমীন এমন কাজ করেও রয়েছেন বহাল। আর দিনে দিনে এই অফিসে সেবা নিতে আসা জনসাধারণের ভোগান্তি ও হয়রানি বেড়েই চলেছে। এইসব ভুক্তভোগী জনসাধারণের প্রশ্ন এই হয়রানির শেষ কোথায়?
জানা যায়, এক আল-আমীনই এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, জমির মাঠ পর্চা নিতে এই ভূমি অফিসে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দিতে হয়। আর আল-আমীনের সবচেয়ে বড় দুর্নীতির জায়গা হল জমির মিউটিশন করা ও খাজনা কাটানো। জমি ক্রয় করার পরে প্রত্যেক জমির মালিককেই বাধ্যতামূলক জমির রেকর্ড (মিউটিশন) করতে হয়। সরকারি ধার্য অনুযায়ী মিউটিশন ফি ১১৭৫ টাকা। কিন্তু তহশিলদার আল-আমীন জমির মালিকদেরকে বিভিন্নভাবে এটা ওটা বুঝিয়ে হয়রানি করে ১০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকার চুক্তি করেন জমির মিউটিশনের জন্য। ১০ টাকা খাজনার জন্য গুনতে হয় ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। তখন জমির মালিকগণ নিরুপায় হয়ে আল-আমীনের ফাঁদে পা দিয়ে হাজার হাজার টাকা গচ্ছা দেয়।
আব্দুর রহমান শিল্পী নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ৯ মাস আগে আমি জমির খাজনা দিতে বাঘড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে তহসিলদার আল-আমীন আমাকে ৩০ টাকা একটি খাজনার চেক কেটে দিয়ে ২ হাজার টাকা নেয়। তারপরে আমি আমার মালিকানাধীন জমি মিউটিশন করার জন্য ভূমি অফিসে গেলে তহশিলদার আল-আমীনের সাথে সাক্ষাৎ হলে সে আমাকে বিভিন্ন কাগজপত্রের কথা বলেন। তবে একপর্যায়ে আল-আমীনের সাথে আমার ২২ হাজার টাকার চুক্তি হয়। চুক্তির প্রেক্ষিতে মিউটিশন সব টাকা পরিষদ করা হয়। মিউটেশন শেষে জমির খাজনা দিতে গেলে সে আমার কাছে ১৮ হাজার টাকা চায়। পরে এলাকার গণ্যমাণ্য কয়েকজনের সুপারিশে খাজনার চেকটি ১৭’শ টাকা দিয়ে কেটে এনেছি, কিন্তু সেখানেও খাজনার চেক দেয়া হয়েছে ১১’শ টাকার।
ভুক্তভোগী মোহম্মদ আলী বলেন, আমি ভূমি অফিসে আমাদের জমির খাজনা দিতে গেলে তহসিলদার আল-আমীন আমাকে বিভিন্ন তালবাহানা করে পরে বলে ৫ হাজার টাকা দিলে খাজনা চেক দিব। আমি খাজনার চেক না কেটে চলে এসে আমার বোনকে পাঠাই। সে ভূমি অফিসে গেলে আল-আমীন তার কাছে বলে দেয় ১০ হাজার টাকা লাগবে। পরে আমি গেলে আমাকে বলে এখন ২৫ হাজার টাকা লাগবে খাজনা দিতে। আমি উপায় না পেয়ে একজনকে ধরে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে খাজনাটি কাটিয়েছি। এইভাবে শত শত মানুষ অসাধু তহশিলদার আল-আমীনের খপ্পড়ে পড়ে হয়রানি এবং ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বাঘরা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. শাহআলম শিকদার বলেন, বাঘড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আল-আমীন এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগের পাহাড় থাকার পরেও সহকারি তহশিলদার আল-আমিনের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন মহল কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তার এমন কর্মকান্ড দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আর এখনই যদি এই দুর্নীতিবাজ তহশিলদাকে শাস্তির আওতায় আনা না যায় তাহলে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি ও হয়রানি চরম আকার ধারন করবে। এ বিষয়ে বাঘড়া ইউনিয়ন ভূমি (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মো. আল-আমীন বলেন, আমার উপর আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণের জন্য সরকারী খাস জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দেয়ায় কিছু অসাধু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কেয়া দেবনাথ বলেন, আল-আমীন এর বিরুদ্ধে প্রায় ৮/৯ মাস পূর্বে একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছিল তখন আমি তাকে শোকজ করেছিলাম। পরবর্তিতে অভিযোগকারী নিজেই তার অভিযোগ তুলে নেয়। তবে এখন তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাইনি। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তবে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল প্রসিডিউর অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।