নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগরে ভরাট করা হচ্ছে সরকারি খাল। স্থানীয় ভূমি তহশিলদারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলছেন, আমাকে বিরক্ত করছেন কেন ? উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাশুর বানিয়াবাড়ি একটি দৃশ্যমান খাল ভরাট করছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে জানতে রাঢ়ীখাল ভূমি অফিসের তহশিলদার উত্তম কুমার সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি দম্ভ করে বলেন, আমাকে বিরক্ত করছেন কেন? আমি খুব ব্যস্ত আছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকায় সরকারি সম্পত্তি দখল, ভরাট বাণিজ্যে ভূমিদস্যুদের নানাভাবে সহযোগিতা করার বিনিময়ে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও অসুস্থতার কথা বলে বেশিরভাগ সময় কর্মস্থলে আসেননা তিনি। অন্যদিকে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে নামজারি, খাজনা ও পর্চা বাণিজ্য করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঢ়ীখাল ২নং ওয়ার্ডের সরকারি শিশু পরিবারের সামান্য দক্ষিণ দিকে বানিয়া বাড়ি দৃশ্যমান খালটির প্রায় ২শ’ ফুট জায়গা বালু ভরাট করা হয়েছে। শাখা খালটি ওই এলাকার নাগরনন্দি খালের সংযুক্ত খাল হিসেবে পরিচিত। এতে খালে পানি প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, অত্র এলাকায় বৃষ্টির ঢলের পানি ও জোয়ারের পানি প্রবাহের একমাত্র খালটি ভরাটের ফলে জলাবদ্ধতার শঙ্কায় পড়ছেন। তারা জানান, কালাম মুন্সীর ছেলে আব্দুল হাই, আব্দুল আলীম মুন্সী ও আব্দুল লতিফ মুন্সী গং এ খাল ভরাট শুরু করেন। রাতের আঁধারে দূর থেকে ড্রাম ট্রাক ও মাহিন্দ্রা ট্রলিতে করে বালু এনে এখানে ফেলা হচ্ছে। অপরদিকে বালুভর্তি এসব ট্রলির ওভারলোডিংয়ে নাকাল করা হচ্ছে গ্রামীণ সব রাস্তাঘাট। এর আগেও আব্দুল হাই পার্শ্ববর্তী এক ব্যক্তির কাছে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে খালের কিছু অংশ মালিকানা বলে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে। প্রায় দুই বছর আগে ক্রয়সূত্রে খালটির ওপর দিয়ে বসতবাড়ির রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট তহশিলদার কাজ বন্ধ করে দিলেও রহস্যজনক কারণে রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়। এখন আব্দুল হাই মুন্সী নিজেই খালের বাকী অংশ ভরাট করেছে।
এ ব্যাপারে আব্দুল হাই মুন্সীর কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করে বলেন, এটা সরকারি রেকর্ডের খাল না। আমাদের মালিকানা জমি তাই ভরাট করছি। ভরাট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় তহশিলদার ভরাট সম্বন্ধে জানেন।
শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশানার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রমতে জানা যায়, রাঢ়ীখাল ইউনিয়নে সরকারি সম্পত্তির পরিমাণ বেশি থাকায় এলাকার ভুমিদস্যুরা দখল ও ভরাট বাণিজ্যের জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসের তহশিলদারের সাথে সখ্যতা রয়েছে। কিছুদিন আগে তিন দোকান সড়কের উত্তর পাশে সরকারি জায়গাটি তহশিলদার উত্তমের সহযোগিতায় ভরাট করা হয়। পরে উপজেলা ভূমি অফিস ওই জায়গায় লাল নিশান টাঙ্গিয়ে দিলেও দখলকারী এখন ওই জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে রাখছেন। এছাড়াও নতুনবাজার সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে সরকারি বিশাল জায়গা ভরাট বাণিজ্যেও হাত রয়েছে তার। উত্তম কুমার সাহা একইসাথে রাঢ়ীখাল ও কোলাপাড়া ইউনিয়ন ভূমির দায়িত্বে রয়েছেন। তার উদাসীনতায় এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন খাল, ফসলী জমি ও জলাধার ভরাট বাণিজ্য হচ্ছে দেদারছে। কিছুদিন আগে দোগাছি বাজার সংলগ্ন খালসহ জলাধার ড্রেজারের মাধ্যমে ভরাট শুরু করে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। পত্রিকায় সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে শ্রীনগর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক ড্রেজারের পাইপ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। এখানেও ভূমি তহশিলদার উত্তম কুমারের হাত ছিল বলে অভিযোগ উঠে। সরকারি সম্পত্তি দখল ও ভরাট বাণিজ্যে ভূমিদস্যুদের সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে।