নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে রাজমিস্ত্রীকে অপহরণের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবলসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, হ্যান্ডকাপ ও স্প্রিংয়ের লাঠি উদ্ধার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ফুলকুচি এলাকা থেকে মোঃ সুজন (২০)কে পুলিশ পরিচয়ে ৬ যুবক মিলে তুলে নেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজমিস্ত্রী সুজন ওই এলাকার হৃদয় মার্কেটের সামনে কোমল পানীয় পান করার সময় দুইটি মোটরসাইকেলে করে ৬ যুবক এসে তার কাছে মাদক আছে বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে রাঢ়ীখাল এলাকার নির্জন স্থানে এবং বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নীচে এনে বাড়ি থেকে মুক্তিপণ এনে দিতে বলে। এসময় সুজন জানায়, ষোল দিন আগে তার বাবা মারা গেছেন এবং মা পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। এমন অবস্থায় সে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সুজনকে বেদম প্রহার করে। রাত ৯টার দিকে অপহরণকারীরা সুজনের মায়ের কাছে ফোন দিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। সুজনের মা আনোয়ারা বেগম তাৎক্ষনিকভাবে স্থানীয়দের পরামর্শে বিষয়টি শ্রীনগর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশের পরামর্শে আনোয়ারা বেগম টাকা নেওয়ার জন্য অপহরণকারীদেরকে সমষপুর এলাকায় তাদের বাড়ির সামনে আসতে বলেন। বেশ কয়েকবার তালবাহানা করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি এ্যাপাচি মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো ল ৪০-১৩৫৭) নিয়ে টাকা নিতে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণ পাইকসা মসজিদের সামনে আসলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা শ্রীনগর থানা পুলিশ শ্রীনগর উপজেলার উত্তর কামারগাঁও গ্রামের আক্তার খানের ছেলে ফয়সাল খান(২৩), দামলা গ্রামের শেখ খলিলের ছেলে আরিফ হোসেন (২০), মাহি শেখের ছেলে মুজিবুর রহমান শাফিনকে আটক করে। পুলিশ তাদেরকে সাথে নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছনবাড়ি এলাকায় আসলে লিয়াকত হোসেন লিমন ও আরিফ মির্জাসহ অজ্ঞাত আরো একজন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সুজনের হাত থেকে হ্যান্ডকাপ খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। এর পরপরই শ্রীনগর থানা পুলিশ রাতভর অভিযানে নামে। একপর্যায়ে দোহার ও শ্রীনগর থানা পুলিশ দোহার উপজেলার নিকরা গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় নজরুল ইসলামের বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষ থেকে লিয়াকত হোসেন লিমনকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিপি লেখা হ্যান্ডকাপ, স্প্রিংয়ের লাঠি ও অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ইয়ামাহা এফজেড মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো ল ২৪-৯৯০৩) উদ্ধার করা হয়। লিমন ওই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। সে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী থানার কুন্ডেরবাজার ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল হিসাবে কর্মরত বলে জানা গেছে। তার কনস্টেবল নম্বর ১১৬৩। অপর আসামি আরিফ মির্জাসহ আরো ১ জন পলাতক রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, লিমনের নেতৃত্বে তারা শ্রীনগর উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে জনসাধারণকে আটক ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। পলাতক আরিফ মির্জা উপজেলার ভাগ্যকুল মান্দ্রা গ্রামের দুলাল সর্দারের পুত্র।
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল তায়েবীর জানান, ৬ জনের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় অপহরণ মামলা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।