রাস্তার কারণে কৃষিপণ্য যথাসময়ে বাজারজাত করতে না পারায় লোকসানের মুখে কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকার পাশে থাকার পরেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়া পায়নি সিরাজদিখান উপজেলা বাসাইল ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডের হাজারো মানুষের জীবনের মান। মূল পটভূমি থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে পরিণত হয়ে আছে বাসাইল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের জীবন। এই গ্রামগুলোর যাতায়াতের ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে, কোন গর্ভবতী মহিলাদেরকে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না সময়মতো। কাঁচা মাটির রাস্তা সরু ও ভাঙ্গা হওয়ায় মৃত ব্যক্তির লাশের খাট গোরস্থানে নিতে যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এই গ্রামগুলোর রাস্তাঘাট এতটাই খারাপ যে দেখার কেউ নেই। ঢাকা মাওয়া মহাসড়ক থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরের সিরাজদিখানের বাসাইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের গোয়াখোলা, বাঘবাড়ি, আগলা পাড়া, দক্ষিণপাড়া, নগর, মোল্লা বাড়ি, মিয়া বাড়ি, দেওয়ান পাড়া, গোয়াল পাড়া মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার একেবারেই বেহাল দশা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের জন্য দুই কিলোমিটারের এই একটি মাত্র যোগাযোগের রাস্তা সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে জর্জরিত হয়ে আছে। ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টিতো আছেই। প্রতিনিয়ত পথচারী ও যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মাটির রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়ে আছে। বৃষ্টি হলেই ওইসব গর্তে পানি আটকে থাকে দীর্ঘদিন। এতে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন যাতায়াত করে এই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে। বৃষ্টি ও বর্ষাকালে শুধুমাত্র এই রাস্তার কারণে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় যেতে পারেনা শিক্ষার্থীরা। সবচাইতে বেশী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা এবং মাছচাষীরা। রাস্তার কারণে কৃষকের কৃষিপণ্য যথাসময়ে বাজারজাত করতে না পারায় লোকসানের মুখে পড়তে হয় সবসময়। তাছাড়া এই রাস্তায় চলাচলকারীরা হরহামেশা দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে। রিক্সা, ভ্যান, মটরসাইকেল চলাচলে এখন একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউপি সদস্য হাজী মোহাম্মদ আইয়ুব খান বলেন, আমার নির্বাচিত ৩নং ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে আছে আড়াই হাজার ভোটার। এইসব মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা হলো গোয়াখোলা থেকে পাথরঘটার এই কাঁচা রাস্তা যেটা বিগত ৫/৬ বছর আগে মাটি দিয়ে করা হলেও বিগত দিনে আর সংস্কার হয়নি।
গ্রামবাসীদের সাথে কথা হলে অনেকেই আক্ষেপের সুরে বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা দেখার কেউ নেই। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা নির্বাচনের সময় আমাদের কাছে আসে ভোট নিতে। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেয় আমাদের যাতায়াতের পথ রাস্তাঘাট ঠিকঠাক করে দিবে। কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ আর আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না। মাঝেমধ্যে কিছু টাকা বরাদ্দ দিলেও তা ঠিক মত কাজ করেনা। উপজেলা এলজিআরডি প্রকৌশলীরাও একদিনের জন্য ভালোভাবে পরিদর্শনে আসেননি।
বাসাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার এই রাস্তার মতো খারাপ রাস্তা আর নাই, আমি একাধিকবার উপজেলা মিটিংয়ে এই রাস্তার কথা বলেছি। তবে আমাকে আশ্বাস দিয়েছে অতিশীঘ্রই এই রাস্তা করে দেবে। সিরাজদিখান উপজেলা প্রকৌশলী শোয়াইব বিন আজাদ বলেন, এই রাস্তাটা আমি নিজে গিয়েও পরিদর্শন করে এসেছি। আমাদের বাসাইল ইউনিয়নে যে বড় ব্রিজটি হচ্ছে যদি আমরা এই রাস্তাই না করি তাহলে এতো টাকা খরচ করে ব্রিজ করে কোন লাভ নেই। মূলত এই ব্রিজটি হয়ে গেলেই এই রাস্তার প্রয়োজন হবে। চিন্তার কোন কারণ নেই রাস্তার কাজও দ্রুত হয়ে যাবে। আমরা ইতোমধ্যে এই রাস্তার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
সিরাজদিখানে খানাখন্দে কাঁচা রাস্তায় ভোগান্তিতে ১০ হাজার মানুষ
আগের পোস্ট